পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পুলিশ কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য হিসেবে থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন বা অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; এবং অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানবাধিকারকর্মী।
চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। তারা যোগদানের দিন থেকে চার বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য পুনর্নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতা বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। কমিশন যদি কোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে নির্দেশ দেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে বাধ্য থাকবে। বাস্তবায়নে অসুবিধা হলে তিন মাসের মধ্যে কারণ জানাতে হবে, যাতে কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে নতুন নির্দেশ দিতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর এটি জুলাই মাসে ঘোষিত জাতীয় সনদেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে।
বাছাই কমিটিতে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যসহ আরও সদস্য থাকবেন। ন্যূনতম পাঁচ সদস্য উপস্থিত থাকলে বাছাই কমিটির কোরাম পূর্ণ হবে। প্রস্তাবে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কমিশনের প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, পদত্যাগ ও অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান ও নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং গবেষণার বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা এবং তাদের আনুগত্যকে কেবল আইন ও রাষ্ট্রের প্রতি নিশ্চিত করা।