
সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) কর্তৃক এল-ফাশার দখলের পর সেখানে গণহত্যা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, সহিংসতা থেকে বাঁচতে এল-ফাশার থেকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো খাবার ও পানি ছাড়াই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ জানায়, পশ্চিম সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবার খাদ্য ও জল ছাড়াই দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এল-ফাশার ও তাওইলা শহরের মধ্যে দীর্ঘ রাস্তার কারণে তারা অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। পালিয়ে আসা মানুষগুলো ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এবং মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে বলেও সংস্থাটি জানায়।
ইউনিসেফের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আবুবকর আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ এল-ফাশার থেকে তাওইলায় পালিয়ে গেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বাস্তুচ্যুতরা প্রতিদিনই আসছে এবং পায়ে হেঁটে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করছে। তিনি বলেন, “বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো চার দিন বা তারও বেশি সময় ধরে পায়ে হেঁটেছেন এবং পথে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকে মারধরের শিকার হয়েছেন, আবার কেউ কেউ খাবার বা পানি ছাড়াই দিন কাটিয়েছেন। যখন তারা পৌঁছায়, তখন তারা তৃষ্ণার্ত, দুর্বল ও অপুষ্টিতে ভুগছে। অনেক শিশু পরিবারহীন অবস্থায় এসেছে এবং তাদের অভিভাবকদের অবস্থান অজানা।”
সুদানের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সালমা ইসহাক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এল-ফাশারে আরএসএফ ২৫ জন নারীকে ধর্ষণ ও ৩০০ জনকে হত্যা করেছে। সুদানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর রবিবার আরএসএফ শহরটি দখল করার পরই এই গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুতি ঘটে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক এল-ফাশারে স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা এবং অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এল-ফাশার হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বরাতে তিনি বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে রোগীরা মারা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, শনিবার ভোরে আরএসএফের হাতে শহর পতনের পর এল-ফাশারের ভেতরে আটকা পড়া হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের জীবন এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে। তাওইলায় এমএসএফের দল বাস্তুচ্যুত মানুষ ও আহতদের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেড় কোটিরও বেশি মানুষ শরণার্থী বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply