1. live@media71bd.com : Media71 : Media71
  2. info@www.media71bd.com : Media 71 :
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন

হরমুজ প্রণালিকে ঘিরে বৈশ্বিক উদ্বেগ: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহ ঝুঁকিতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে হরমুজ প্রণালি ঘিরে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সামুদ্রিক রুট নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে, বিশেষত জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে ইরান হরমুজ প্রণালিটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে পারে। এমনটা ঘটলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান—যারা মূলত উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলের ওপর নির্ভরশীল।

ইরান ও ওমানের মাঝে অবস্থিত হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবাহিত হয়, যা বিশ্বজুড়ে পরিবাহিত তেলের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। মাত্র ৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত এই সংকীর্ণ পথ দিয়েই বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি বাণিজ্য হয়। এখানে সামান্য বিঘ্নতাও বিশ্ববাজারে তেলের দামে নাটকীয় উল্লম্ফন ঘটাতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমুজ প্রণালি ইরানের হাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অস্ত্র। দেশটি চাইলে ধাপে ধাপে প্রণালির চলাচল সীমিত করতে পারে—যেমন, সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি, মাইন স্থাপন, বাণিজ্যিক জাহাজ আটকানো, বা সাবমেরিন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়া। ১৯৮০–৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধেও ইরান এই রুটকে ব্যবহার করেছিল সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে।

সম্প্রতি ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড হরমুজ প্রণালির কাছে তাদের নৌ ইউনিট পরিদর্শন করেছে। সেখানে হাই-স্পিড ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নৌযান, সাবমেরিন, অ্যান্টি-শিপ মাইন ও ড্রোন মোতায়েনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ভোরটেক্সা ও ইআইএ-এর তথ্য বলছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানি করে সৌদি আরব। অন্যদিকে, আমদানির দিক থেকে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই রুটের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। বিশেষত চীন তুলনামূলক কম দামে ইরান থেকে তেল নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ৬০ শতাংশ, ভারতের বড় অংশ এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক প্রায় ৭ লাখ ব্যারেল তেল এই পথ দিয়েই আসে।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইরান নিজস্ব পাইপলাইন তৈরি করেছে। তবে সেগুলো হরমুজ প্রণালির কার্যকর বিকল্প হতে পারেনি। সৌদি আরবের পূর্ব-পশ্চিম পাইপলাইনের ক্ষমতা দৈনিক ৫০ লাখ ব্যারেল এবং আমিরাতের ফুজাইরাহ পাইপলাইনে ১৫ লাখ ব্যারেল। ইরানের গোরেহ-জাস্ক পাইপলাইন এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হরমুজ প্রণালি সাময়িকভাবে বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা সামরিক উপায়ে তা পুনরায় খুলে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম দ্রুত বেড়ে যেতে পারে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

ফলে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট