
তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও অটোমেশনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্য ও কৃষি, ফার্নিচার, পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতে প্রায় ৫৯ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ তথ্য জানান।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক কার্যক্রমে দ্রুত পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অধিক মনোযোগ দেওয়া এখন জরুরি।
তিনি বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কেবল প্রযুক্তিগত নয়; এটি উৎপাদনব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজারে মৌলিক পরিবর্তন আনছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের শিল্প ও সেবা খাতে বড় প্রভাব ফেলছে।”
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরে বৈশ্বিক চাকরির বাজারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এলডিসি-পরবর্তী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্মার্ট মানবসম্পদই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর নতুন যুগে টিকে থাকতে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া এবং শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো অপরিহার্য।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে।
তিনি জানান, এনএসডিএ বর্তমানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি জাপানে এক লাখ দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে জাপানি ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নারীদের দক্ষতা উন্নয়নেও তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ। তিনি বলেন, এটুআই ও ইউএনডিপির ২০১৯ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচটি প্রধান খাতে প্রায় ৫৮.৯ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, কর্মরত জনবলকে প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো সময়ের দাবি।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন—
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব (আইসিটি ডিভিশন) মোহাম্মদ সাইফুল হাসান,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম,
ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামস রহমান,
আইসিএমএবি সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ,
ট্রান্সকম গ্রুপের করপোরেট মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান এম সাব্বির আলী,
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর রিজিওনাল সিনিয়র ম্যানেজার খান মোহাম্মদ শফিকুল আলম,
বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী
এবং ব্রেইন স্টেশন ২৩-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবীর।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply