শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের প্রায় ১ হাজার ৩০০ নেতা নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউটাউনে গড়ে উঠেছে তাদের নতুন আবাস। কেউ রাজনৈতিক কর্মসূচি সাজাচ্ছেন, কেউ সময় দিচ্ছেন ব্যায়ামে কিংবা নতুন শখে। এ নিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত নির্বাসনেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে, আর তার একমাত্র লক্ষ্য দেশকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা। নির্বাসিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তিনি কর্মসূচি সাজাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় ১ হাজার ৩০০ শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রী দেশ ছাড়েন। তাদের সঙ্গে আরও অনেকে—সাংবাদিক, সিভিল সোসাইটি কর্মী, সেনা কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও কূটনীতিক মিলে প্রায় ২ হাজার মানুষ বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।
নিউটাউনে বসবাসরত এক সাবেক এমপি বলেন, নির্বাসিত জীবনের রুটিন এখন অনেকটা একঘেয়ে। ফজরের নামাজের পর জিমে যাওয়া, অনলাইনে বৈঠক করা এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা প্রতিদিনের অংশ হয়ে গেছে। মজা করে তিনি বলেন, দেশে ফিরে হয়তো শেফ হয়ে যাবেন।
২০২৪ সালের ২ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কলকাতার নিক্কো পার্কে উপস্থিতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দেশত্যাগের কোনো প্রমাণ পায়নি। বর্তমানে তিনি স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে কলকাতার একটি বড় ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন এবং প্রায়ই দিল্লিতে গিয়ে রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। দলের সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “আমরা এখানে বিশ্রাম নিতে আসিনি, আমরা বাঁচতে এসেছি—আগামী দিনের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে।”
কলকাতায় আওয়ামী লীগের একটি গোপন অফিস থাকার খবর ছড়ালেও কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি এটিকে ‘অতিরঞ্জন’ বলে দাবি করেছেন। তার ভাষ্য, নিউটাউনে একটি জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়েছে যেখানে নেতারা মিলিত হন, তবে সেটিকে অফিস বলা যাবে না।
প্রতিবেদনে নির্বাসিত নেতাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকার এক তরুণ এমপি দিল্লিতে গিয়ে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে পালানোর সময় সামনের চুল পাতলা হয়ে গিয়েছিল। স্ত্রী অনেক দিন ধরেই বলছিলেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করতে। অবশেষে দিল্লিতে এসে নতুন লুক পেয়েছি।”