সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভারতীয় ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং এর পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান মারসূস’ বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের এই সংঘাত কি একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, নাকি এটি সাময়িক উত্তেজনা মাত্র – এ প্রশ্ন এখন সবাইকে ভাবাচ্ছে।
এই সংঘাতের পেছনে ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক কারণগুলো জটিল ও বহুমুখী। কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা, ক্রমবর্ধমান সামরিক আধিপত্যের লড়াই এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাবের উত্থানই এর মূল চালিকাশক্তি। একদিকে ভারত, যা তার সামরিক ক্ষমতা ও কৌশলগত প্রভাব বাড়াতে চায়, অন্যদিকে পাকিস্তান, যা জাতীয় সুরক্ষার জন্য মরিয়া।
অপারেশন ‘বুনিয়ান মারসূস’-এর শুরু পাকিস্তানের এই বার্তা দিচ্ছে যে, তারা নিজস্ব ভূখণ্ডের নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ড্রোন হামলার অভিযোগ আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এই পাল্টাপাল্টি হামলা পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের দেওয়াল আরও শক্ত করছে।
তবে এই উত্তেজনা শুধু সামরিক দিকেই সীমাবদ্ধ নয়, এর গভীরে রয়েছে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অস্থিরতা। উভয় দেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরগতিতে জর্জরিত। সামরিক সংঘাতের দীর্ঘায়িত হওয়া দুই দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশগুলোকে কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে যাতে এই উত্তেজনা পূর্ণমাত্রার সংঘাতে রূপ না নেয়। শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের জন্য সংলাপের পথ উন্মুক্ত করা অত্যাবশ্যক।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশ যদি সংঘাতে জড়ায়, তবে এর ফলাফল কী হবে? দক্ষিণ এশিয়ায় এমন এক যুদ্ধের প্রভাব শুধু এই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করবে। অতএব, শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক সমাধানই হতে পারে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।
শান্তির পথে প্রত্যাবর্তন কি সম্ভব? সময়ই এর উত্তর দেবে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত