যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে দর-কষাকষিতে শুরু থেকেই বেসরকারি খাত, অর্থনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ায় হতাশ রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের মতে, শুল্ক না কমলে এর ভুক্তভোগী হবেন তাঁরাই।
রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা স্পষ্ট করে বলেছেন, দর–কষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে। অথচ এই আলোচনার জন্য বাংলাদেশের হাতে এখন মাত্র ১০ দিন সময় আছে। সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে দুই দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। কারণ, শুল্ক কমানোর চূড়ান্ত ক্ষমতা ইউএসটিআরের নেই—এটি ট্রাম্প প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত।
এখন এসে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বেসরকারি খাতকে অনানুষ্ঠানিকভাবে লবিস্ট নিয়োগসহ বিভিন্ন কৌশলে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অথচ বেসরকারি খাত আগে থেকেই আলোচনায় থাকতে চেয়েছিল। এপ্রিলে তারা লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শও দিয়েছিল, কিন্তু তখন সরকার তা আমলে নেয়নি।
গত শনিবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বেসরকারি খাতকে আলোচনায় সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানান। এর পরপরই বিজিএমইএ দ্রুত দুটি মার্কিন লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে সময়ক্ষেপণের কারণে মানসম্মত লবিস্ট পাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এনডিএ (নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) থাকার কথা বলে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাঁদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানিতে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, “৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এমন সংকট দেখিনি। আমার এক বড় ক্রেতা বলেছে, দর–কষাকষিতে আমাদের অবস্থান দুর্বল।”
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, “আমরা কূটনৈতিকভাবে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছি। তবে এখনো ১০ দিন সময় আছে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবহার করে শেষবারের মতো চেষ্টা করা উচিত। এই শুল্ক না কমলে ছয় মাসের বেশি ব্যবসা টিকবে না, ১০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে।”
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৫৭টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হার ছিল ৩৭ শতাংশ। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়, তবে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে।
প্রথমদিকে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকী। পরে যুক্ত হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ৯–১১ জুলাই ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়, কিন্তু কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “আমরা মাত্র দুই দিন আগে লবিস্ট নিয়োগের জন্য সরকারের অনানুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু দেরি হওয়ায় ভালো লবিস্ট পেতেও সমস্যা হচ্ছে। সময় খুব কম, ভালো ফল পাওয়া কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত