ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চলতি বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না—এমন বিধানের পক্ষে ৮৯ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপে ৪০টি প্রশ্নে সারা দেশের ১ হাজার ৩৭৩ জনের মতামত এবং ১৫টি নাগরিক সংলাপের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তথ্য উপস্থাপন করেন সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন।
ফলাফলে আরও উঠে এসেছে—সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার পক্ষে ৬৯ শতাংশ, একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদনেতা না হওয়ার পক্ষে ৮৭ শতাংশ, নিম্নকক্ষে নারী আসন সংরক্ষণে (ঘূর্ণমান পদ্ধতি) ৬৩ শতাংশ এবং উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষের মতামত।
এ ছাড়া, বিরোধী দল থেকে নিম্নকক্ষে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগে ৮৬ শতাংশ এবং উচ্চকক্ষে ডেপুটি স্পিকারের ক্ষেত্রে ৮২ শতাংশ মানুষ সম্মতি দিয়েছেন। নির্বাচনী কার্যক্রমে নির্বাহী বিভাগের পদক্ষেপের আগে ইসি অনুমতি বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসির সুষ্ঠুতা সনদ প্রকাশের পক্ষে ৮৬ শতাংশ এবং নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষা ও অসত্য তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিলের পক্ষে ৮৮ শতাংশ মানুষ।
সন্ত্রাসী, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্তদের দলীয় সদস্যপদ অযোগ্য ঘোষণার পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ শতাংশ, নির্বাচনকালে ১২০ দিনের জন্য দলনিরপেক্ষ সরকার গঠনের পক্ষে ৮৩ শতাংশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা।
এ ছাড়া এনসিসি গঠন করে সাংবিধানিক পদ ও তিন বাহিনীর প্রধান নিয়োগে ৮০ শতাংশ, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়াতে ৮৮ শতাংশ এবং মৌলিক অধিকারকে শর্তহীন করার পক্ষে ৮৪ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট বাধ্যতামূলক করার পক্ষে ৮৫ শতাংশ এবং দলীয় নিবন্ধন প্রতি ৫ বছরে নবায়নের পক্ষে ৭৬ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছেন।
দলের সব আর্থিক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে ও অডিট প্রকাশের পক্ষে ৯১ শতাংশ, প্রার্থী মনোনয়নে দলীয় সদস্যদের মতামত বাধ্যতামূলক করার পক্ষে ৮৩ শতাংশ এবং দলের বিদেশি শাখা ও লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন না রাখার পক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে ৯০ শতাংশ, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনে ৮৮ শতাংশ, স্থানীয় সরকারকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানে ৮৪ শতাংশ, সরকারি কৌঁসুলি ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দক্ষ পেশাজীবী নিয়োগে ৮৫ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনে ৮১ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনে ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা সম্মতি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “জরিপের ফল প্রমাণ করে জনগণ সংস্কার চায়। বিদ্যমান পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমূল পরিবর্তন জরুরি।”
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসও বক্তব্য দেন।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত