রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কারিগরি দিক থেকে বৈধ হলেও এটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় অবস্থিত হওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ—এমন মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। সংস্থাটি বলছে, জনসমাগমপূর্ণ এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া জরুরি।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বাংলামোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির পক্ষ থেকে ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরের রানওয়ের ৫০০ ফুট পর থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট এলাকা জনসমাগমকারী স্থাপনার জন্য নিরাপদ নয়। যদিও ওই এলাকায় সর্বোচ্চ ১৫০ ফুট উচ্চতার ভবনের অনুমতি থাকলেও, বাস্তবে এমন স্থাপনা নিরাপদ নয় বলেই বিবেচিত।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান জানান, ১৯৯৫ সালের ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় দুর্ঘটনাস্থলটি জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সেখানে রাজউকের অনুমোদনে ভবন নির্মাণ হয়েছে, যা কার্যত অবৈধ এবং বিমান দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “ঢাকা শহর যতটা সম্প্রসারিত হয়েছে, ততটাই উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের ন্যূনতম নীতিমালা উপেক্ষিত হয়েছে। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ওড়ানো দায়িত্বহীনতারই প্রকাশ।”
পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, “এই দুর্ঘটনার দায় শুধু স্কুল কর্তৃপক্ষের নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, বেবিচক, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী। তাদের অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র প্রদানের মাধ্যমে তারা এই দায় এড়াতে পারে না। আইনের আওতায় এনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, সোমবার মাইলস্টোন স্কুলে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৩ জন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সারাদেশে শোক ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
বিআইপির সুপারিশসমূহ:
বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়া থেকে সব ধরনের স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও জনসমাগমকারী স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া।
ওই এলাকায় ভবিষ্যতে পাখি আকৃষ্ট হতে পারে এমন কিছু না করা এবং সেখানে সবুজায়ন ও কৃষি জমি সংরক্ষণ।
সব অবৈধ ভবন চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলা।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সব পক্ষকে শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা।
একটি জাতীয় পর্যায়ের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন।
বিআইপির সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন মন্তব্য করেন, “এই দুর্ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিফলন। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও জননিরাপত্তার বিষয়ে এখন নতুনভাবে ভাবার সময় এসেছে।”