ইরাকের বাবেল প্রদেশে ভয়াবহ খরতাপ এবং পানি সংকটের কারণে শুক্রবার (২৫ জুলাই) শত শত নাগরিক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, দেশের হিল্লা শহরের নিকটবর্তী আল-মাজরিয়েহ গ্রামে অন্তত ৩০০ বিক্ষুব্ধ মানুষ সরকারের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি পানি সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইরাক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবল প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটি খরা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং নদীর পানিপ্রবাহ হ্রাসের মুখোমুখি—যা পরিস্থিতিকে দিনদিন জটিল করে তুলছে।
ইরাকের প্রশাসন জানিয়েছে, পানির সংকটের জন্য আঞ্চলিক প্রতিবেশী ইরান ও তুরস্কে নির্মিত উজানের বাঁধগুলোকেও দায়ী করা হচ্ছে। এসব বাঁধের কারণে দজলা ও ফোরাত নদীর পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে, যা ইরাকের কৃষি এবং পানীয় জলের চাহিদাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।
৬৬ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী সাদুন আল-শাম্মারি বলেন, “আমরা ৩৫ দিন ধরে পানি পাচ্ছি না। এর আগেও দীর্ঘদিন ধরে আমরা সংকটে ছিলাম।” আরেক বিক্ষোভকারী, ৩৫ বছর বয়সী কাহতান হুসেইন বলেন, “এটি আমাদের মৌলিক অধিকার। আমরা বেশি কিছু চাই না। আমাদের কোনো পানি নেই, পাইপলাইন পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।”
এর আগের দিনই একই দাবিতে হওয়া আরেকটি বিক্ষোভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ইরাকের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৫ সাল হতে চলেছে ১৯৩৩ সালের পর অন্যতম শুষ্ক বছর। বর্তমানে দেশটির পানির রিজার্ভ ক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র খালেদ শামাল মে মাসে জানান, এবারের খরার মৌসুমে দেশের পানির মজুত ৮০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, উজানের দেশগুলোর সহযোগিতার অভাব এবং অব্যাহত পানি প্রবাহ হ্রাস দেশের পানির নিরাপত্তাকে আরও বিপন্ন করে তুলছে।
এ সংকট শুধু বাবেল প্রদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ ইরাকের দিওয়ানিয়া প্রদেশের বহু গ্রামও বহু বছর ধরে পানির সংকটে ভুগছে। সেখানে স্থানীয় জনগণ সম্প্রতি পুনরায় বিক্ষোভে নেমেছেন এবং সরকারের কাছে খাওয়ার পানি ও কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।
পানির অভাবে অনেক কৃষক তাদের জমি চাষাবাদের জন্য অক্ষম হয়ে পড়েছেন এবং কেউ কেউ জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে কৃষিকাজে পানি ব্যবহার ব্যাপকভাবে সীমিত করেছে, যাতে করে খাওয়ার পানির সংস্থান নিশ্চিত করা যায়।