পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিধান রেখে ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত আইনে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিকে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, ন্যূনতম এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা বিবেচনা করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই খসড়া প্রণয়ন করা হয়। ইতোমধ্যে খসড়াটি সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
অধ্যাদেশে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২, ৩৯ ও ৪০ অনুযায়ী সাংবাদিকদের জীবন, ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং পেশাগত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ বা প্রচারের কারণে সাংবাদিককে কোনো ব্যক্তি, সরকারি সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ভয়ভীতি, হুমকি বা হয়রানি করতে পারবে না। তথ্যসূত্র প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না এবং সাংবাদিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা। সরল বিশ্বাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে, ভিন্ন উদ্দেশ্য প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। সহিংসতার শিকার হলে সাংবাদিক সরাসরি আদালতে অভিযোগ করতে পারবেন, যা তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।
অপরাধের সংজ্ঞায় শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অপমান, সার্বক্ষণিক নজরদারি, যৌন হয়রানি, অবৈধ আটক, গুম, অপহরণসহ সব ধরনের ভয়ভীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থদণ্ড সাংবাদিককে প্রদান করতে হবে।
তবে মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংবাদিকও অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিনিয়োগকারী, পরিচালক বা ব্যবস্থাপক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন—যদি না প্রমাণ করতে পারেন যে ঘটনাটি তার অজ্ঞাতসারে ঘটেছে বা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন।