ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও যশোরের বাজারে কমছে না দাম। সরবরাহ থাকলেও চড়া দামের কারণে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে জাতীয় মাছটি। বাজারে মাছ থাকলেও ক্রেতা নেই, অনেকেই দাম শুনে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি যেন বিলীন হওয়ার পথে।
বিগত আট মাস ধরেই ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল। জানুয়ারিতে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, মার্চে একই দামে, আর এপ্রিল মাসে রেকর্ড ৭০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মে মাসে দাম দাঁড়ায় ১৩০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, জুনে ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, জুলাইয়ে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা এবং চলতি আগস্টের শুরুতে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা কেজিতে। বর্তমানে মৌসুম শুরু হলেও ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
যশোর বড়বাজারের বিক্রেতা এরশাদ আলী বলেন, “ঘন ঘন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে পারছে না। ফলে মৌসুমেও সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছে না।”
বিক্রেতা আলাউদ্দিন ব্যাপারী জানান, “৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও একের পর এক লঘুচাপে জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। বাজারে সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি।”
মাছ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, “আগে দিনে ১০০ কেজি মাছ বিক্রি করতাম, এখন ৫০-৬০ কেজি বিক্রি হয়, কখনো তারও কম।”
নিউমার্কেটের ক্রেতা লাবন্য আক্তার বলেন, “যে কারণই থাকুক, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা যাতে ইলিশ থেকে বঞ্চিত না হই, সেদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।”
মোল্লাপাড়ার নাজমুল হোসেন বলেন, “শুনেছি ভারত দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ চাইছে। এ সুযোগে সিন্ডিকেট যেন মজুত করে ভোগান্তি না বাড়ায়, প্রশাসনের তদারকি প্রয়োজন।”
বেজপাড়ার লাকী নূরজাহান বলেন, “ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, সুস্বাদু মাছ। বছরের অন্য সময়ে কিনতে পারি না, মৌসুমেও যদি নাগালের বাইরে থাকে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
বিক্রেতারা বলছেন, আবহাওয়া, নিষেধাজ্ঞা ও সরবরাহ ঘাটতি দাম বাড়াচ্ছে। তবে ক্রেতাদের দাবি, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। তারা চান প্রশাসন বাজারে কার্যকর নজরদারি চালাক, যাতে জাতীয় মাছ ইলিশ কেবল উচ্চবিত্তের মাছে পরিণত না হয়।