কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাঁড়ারা গ্রামের বেশ কিছু জমিতে এখন সাফল্যের সঙ্গে চাষ হচ্ছে লতি কচু। স্যাঁতসেঁতে নিচু জমিতে এই কচুর আবাদ উদ্যোক্তা আসমা খাতুনের জীবনে এনেছে আর্থিক সাফল্য ও নতুন সম্ভাবনা।
বারি পানি কচু-১ জাতের চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন আসমা খাতুন। সাধারণত বর্ষায় পানিতে ডুবে যাওয়া জমিতে কৃষকেরা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে যশোর অঞ্চলের টেকসহ কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই কচুর আবাদে নামেন।
চলতি বছরের ২০ মার্চ মিরপুর কৃষি অফিস থেকে উন্নত জাতের বারি পানি কচু-১ এর চারা সংগ্রহ করে খাঁড়ারা ব্লকে ২০ শতক জমিতে চাষ শুরু করেন আসমা খাতুন। মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচে তিনি পান ভালো ফলন ও উচ্চ লাভ। অল্প সময়ে লতি বিক্রি শুরু করে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
প্রতি সপ্তাহে দু’বার বাজারে নিয়ে যান প্রায় ৫০ কেজি করে কচুর লতি, যা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকার কচু বিক্রি করেছেন তিনি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও এক লাখ টাকার বিক্রির আশা করছেন।
স্থানীয় চিকিৎসক সুজন আলী বলেন, “বারি পানি কচু-১ জাতের কচু চাষ করে আসমা খাতুন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় দারুণ সাড়া ফেলেছেন। এখন অনেক নারী তার দেখাদেখি লতি কচুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।”
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান সোহাগ জানান, “লতি কচুর ফলন ভালো, স্বাদ উন্নত এবং বাজারে চাহিদা বেশি—এজন্য কৃষকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ চাষে ঝুঁকছেন।”
মিরপুরের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, “খাঁড়ারা ব্লকে প্রতিবছরই লতি কচুর আবাদ বাড়ছে। সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি নারীরাও এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আসমা খাতুনকে আমরা তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছি।”
অন্য উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. মকিবুল ইসলাম বলেন, “কচু চাষ এখন আর শুধু ঘরোয়া ভোগে সীমাবদ্ধ নয়, এটি পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক কৃষির একটি স্থায়ী মডেলে।”
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, “বর্ষায় নিচু জমিতে লতি কচুর চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। সরকারিভাবে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, কারণ এটি দ্রুত ফলনশীল ও লাভজনক ফসল। আসমা খাতুন আমাদের দিকনির্দেশনা ও বাজার ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিয়ে নিয়মিত আয় করছেন—যা তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।”