
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে দাখিল করা একাধিক আপিলের শুনানি আগামীকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এদিন আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া শুনানি করেন, রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংসদে এই সংশোধনী পাস করেছিল।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৮ সালে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট বিএনপি সরকারের সময় সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বৈধ থাকে।
পরবর্তীতে আবেদনকারীরা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকায় এ ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে মামলার শুনানি শুরু হয়। তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ আটজন সিনিয়র আইনজীবী অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য দেন এবং অধিকাংশই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহালের পক্ষে মত দেন।
সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এ বি এম খায়রুল হক।
রায় প্রকাশের আগেই একই বছরের ৩০ জুন সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ আরও ৫৫টি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক রিভিউ আবেদন জমা পড়ে। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান আবেদন করেন। এরপর ১৬ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ২৩ অক্টোবর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনও রিভিউ আবেদন করেন।
এই চারটি রিভিউ আবেদনের যৌথ শুনানি শেষে আপিল বিভাগ নতুন করে আপিল শুনানির অনুমতি দেয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেন। এর ফলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরায় ফিরতে পারে—এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply