যশোরের চৌগাছা উপজেলার চৌগাছা-টু-পুড়াপাড়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চরম বেহাল অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের অন্তত ৭ কিলোমিটার অংশে পিচ ও বিটুমিন উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, যা বর্তমানে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে টেঙ্গুরপুর থেকে কমলাপুর মোড় পর্যন্ত অংশে হাঁটু সমান গর্তে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। সড়কটি ঝিনাইদহের মহেশপুর ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এই সড়কের দুরবস্থায় খড়িঞ্চা, দেবলয়, সাঞ্চাডাঙ্গা, কমলাপুর, শ্যামনগর, চুটারহুদা, যাদবপুর, শাহাপুর, হাবাশপুর, জাগুসা, নাটিমা, মান্দারতলা, গয়েশপুর ও সামান্তসহ অন্তত ৮০টি গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
পুড়াপাড়া বাজার এলাকাটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মিল, চাতাল, ব্যাংক, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পশুহাট ও কাঁচাবাজার রয়েছে। সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার নিয়মিত হাট বসে, যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনাবেচার জন্য আসেন। কিন্তু সড়কের করুণ অবস্থার কারণে যানবাহন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিন এই সড়কে বাস, ট্রাক, নছিমন, করিমন, ইজিবাইক, ভ্যান, চার্জার, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পথচারী ও চালকদের জন্য সড়কটি এখন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে।
এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। এখানকার উৎপাদিত গম, ভুট্টা, ধান, পাট, সরিষা, বেগুন, টমেটো, পেঁপে, কাঁচামরিচসহ নানা কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়। কিন্তু রাস্তার দুরবস্থার কারণে কৃষিপণ্য পরিবহনে বাড়তি সময় ও খরচ হচ্ছে, যা কৃষকদের ক্ষতির মুখে ফেলছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও চালকরা সড়কটির দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, রাস্তাটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। চাতাল ব্যবসায়ী নুরুণ নবী ও এস এম মিলন জানান, হাটের দিনগুলোতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। শিক্ষক রনি খাতুন, আলী হোসেন ও ময়না খাতুন বলেন, সড়কটি দ্রুত সংস্কার না হলে চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে।
ইজিবাইক চালক শরিফুল ইসলাম, করিমন চালক হাসানুর রহমান, ট্রাকচালক আকবার আলী ও ভ্যানচালক আলামিন হোসেন বলেন, “প্রতিদিন জীবনঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।” পথচারী মাসুরা আক্তার জানান, “হাঁটু সমান পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।”
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ জানান, পুড়াপাড়া সড়কটির অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত খারাপ। এ বছরের বাজেটে বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।
এলাকার সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা সড়কটির দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।