যশোরে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের রিটেলারদের বিরুদ্ধে সিমের মালিকানা পরিবর্তনের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, কিছু রিটেলার নিজেদের মতো করে খাত তৈরি করে ইচ্ছেমতো টাকা নিচ্ছেন, এমনকি প্রতিবাদ করলে অশোভন আচরণও করছেন তারা। শহরের বিভিন্ন কাস্টমার কেয়ার ও রিটেলার পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সরকারের নতুন নির্দেশনা—একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১০টির বেশি সিম থাকলে অতিরিক্ত সিম বন্ধ করা হবে—এই ঘোষণাকে পুঁজি করেই রিটেলাররা গ্রাহকদের পকেট কাটছেন। যশোর শহরের চিত্রামোড়, দড়াটানা, গাড়িখানা, চৌরাস্তা, মনিহার ও জেলখানা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, একেক কোম্পানির রিটেলার একেক রকম টাকা নিচ্ছেন।
রবি ও এয়ারটেল রিটেলাররা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করছেন, গ্রামীণফোন রিটেলাররা নিচ্ছেন প্রায় ১৫০ টাকা, আর বাংলালিংকের ক্ষেত্রে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে—যা পরে সিমে রিচার্জ করে দেওয়া হয়। তবে টাকা না দিলে মালিকানা পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার গ্রাহকদের সরাসরি কাস্টমার কেয়ারে যেতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
একাধিক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সারা দেশে চারটি প্রধান মোবাইল অপারেটর থাকলেও মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও ফি এক নয়—যা স্পষ্ট বৈষম্য ও হয়রানির দৃষ্টান্ত।
ফয়সল ইসলাম নামের এক গ্রাহক জানান, তার ১০টির বেশি সিম থাকায় স্ত্রী’র নামে মালিকানা পরিবর্তন করতে গিয়ে তিনি নানা রিটেলারে ঘুরেছেন। “অধিকাংশ জায়গায় মনগড়া টাকা দাবি করেছে, শেষে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই কাজ করাতে হয়েছে,” বলেন তিনি। তবে মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, কিছু দোকানি বিনা খরচেই মালিকানা পরিবর্তন করে দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর রেলরোডের গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধ লাইন। অধিকাংশই সিমের মালিকানা পরিবর্তনের কাজে এসেছেন। ইনচার্জ জানান, “হেড অফিস থেকে ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, আমরা সেই নিয়মেই নিচ্ছি।” তবে বাইরের রিটেলাররা বেশি নিচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
অন্যদিকে, এমকে রোডের বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার ৩৫০ টাকা নিচ্ছে, যা পরে সিমে রিচার্জ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “এটি কোম্পানির নির্ধারিত ফি।”
চিত্রামোড় এলাকার রবি ও এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ার বিনামূল্যে মালিকানা পরিবর্তনের সেবা দিচ্ছে, যদিও বাইরের রিটেলাররা টাকা নিচ্ছেন।
তিনটি কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা শুধু কোম্পানির নির্ধারিত নিয়মে কাজ করি, দামের পার্থক্যের বিষয়ে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।” তাদের দাবি, রিটেলার পয়েন্টগুলো সরাসরি কোম্পানির ডিলারদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তাই নিয়ন্ত্রণ সীমিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংক কর্পোরেট কমিউনিকেশনস হেড গাজী তৌহিদ আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আপনি ইমেইলে প্রশ্ন পাঠান, আমি লিখিত উত্তর দেব।” তবে পরে কোনো উত্তর পাঠানো হয়নি।
অন্যদিকে, বিটিআরসি’র কাস্টমার সার্ভিস নাম্বার ১০০-এ যোগাযোগ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বাধীন জানান, “সিম মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ফি বিটিআরসি নির্ধারণ করেনি। যদি কেউ অতিরিক্ত টাকা নেয়, গ্রাহক সরাসরি বিটিআরসিতে অভিযোগ করতে পারবেন, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, শুক্রবার থেকে কার্যকর হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্ত—একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১০টির বেশি সিম থাকলে অতিরিক্ত সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই রিটেলারদের অর্থবাণিজ্য ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ জোরালো হচ্ছে।