ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডিসেম্বরের আগেই তফসিল ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে কমিশন। এজন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন দল নিবন্ধনসহ সব প্রস্তুতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
ইসির সূত্র জানায়, সম্ভাব্য ভোটগ্রহণের তারিখ হিসেবে ২০২৬ সালের ৮ ও ১১ ফেব্রুয়ারিকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার হওয়ায় সেটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কারণ এদিনের আগে দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় ভোটের পরিবেশ তৈরি সহজ হবে। এ ছাড়া বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনও রোববারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই ভোট সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সময়সীমা নিয়ে সরকার ও ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার জানান, ডিসেম্বরের আগেই ইসির সব প্রস্তুতি শেষ হবে। ভোটের নির্দেশ পেলেই নির্বাচন করতে প্রস্তুত তারা। তিনি আরও বলেন, “ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রোজা শুরু হবে, তাই ভোটের তারিখ রোজার আগেই নির্ধারণ করতে হবে।”
ইসির নির্বাচনি পরিকল্পনা অনুযায়ী, এবার ভোটার সংখ্যা হবে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ এবং ভোটকেন্দ্র থাকবে প্রায় ৪৬ হাজার।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে সব বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে কোনো পক্ষপাতের অভিযোগ উঠতে পারবে না। তারা রাষ্ট্রের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে এবং ভোটারদের নিরাপদে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, নির্বাচনের সময় প্রায় ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবে এবং সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। তিনি আরও জানান, “সেনাবাহিনী ৫ আগস্ট থেকে মাঠে সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের বিচারিক ক্ষমতাও রয়েছে।”
নির্বাচনি গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে সরকার ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠনের চিন্তা করছে বলে জানান প্রেস সচিব। এই সেন্টার গুজব শনাক্ত, প্রতিরোধ এবং তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক তথ্য প্রচারে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “নির্বাচনের সময় যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা পর্যায়ের রিপোর্ট নিয়মিত কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের রদবদল নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবে মোট আট লাখ সদস্য। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার, ১ লাখ ৪১ হাজার পুলিশ, বাকি অংশে অন্যান্য বাহিনী থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর বিএনপি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে।
তবে প্রধান উপদেষ্টা ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণা বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
পরে ইউনূসের লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি আসে—ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হলে বিএনপি তাতে অংশ নেবে। ফলে নির্বাচন আয়োজনের চূড়ান্ত সময় এখন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের দিকেই এগোচ্ছে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত