পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের দেওয়া এক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়েছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে প্রতিদিন রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক হতো এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলোকে ভাগ করে পরিচালিত হতো ‘ব্লক রেইড’। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ব্যবহার করা হয়েছিল প্রাণঘাতী অস্ত্র।
২০২৪ সালের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে তিনি এ জবানবন্দি দেন। মামলাটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২২ সাল থেকে শেখ হাসিনার সরকারের পতন পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। জবানবন্দিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন ২০১৮ সালের রাতের ভোট, গুম, গোপন বন্দিশালা এবং আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ভূমিকা সম্পর্কেও।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, “আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে একপর্যায়ে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নজরদারি, গুলি চালানো এবং ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করার গোপন পরিকল্পনা করা হয়। আমি পরে জানতে পারি, র্যাবের ডিজি হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় হেলিকপ্টার ব্যবহার ও অপারেশন পরিচালিত হয়। তবে পুলিশপ্রধান হিসেবে আমি এসব কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলাম না। মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।”
প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তিনি জানান, “আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলোতে ব্লক রেইড পরিচালনার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবেই নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে জানান যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় আমার সামনে অতিরিক্ত ডিআইজি (হেডকোয়ার্টার) প্রলয় জোয়ারদার উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই নির্দেশনা জানতে পারেন।”
বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।