রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহের কাছ থেকে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪৩) এর ২৬ খণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের দাবি, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জরেজুল ইসলাম (জরেজ) এবং জরেজের ‘প্রেমিকা’ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হত্যার পেছনে আর্থিক বিষয়ও যুক্ত ছিল।
র্যাব বলেছে, জরেজ প্রেমিকার মাধ্যমে আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, জরেজকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার প্রেমিকাকেও আটক করা হয়েছে।
মামলা ও তদন্ত:
আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম শাহবাগ থানায় জরেজ ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তদন্ত শুরু থেকেই জরেজকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, প্রেমিকার কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেছেন,
“জরেজ শামীমার মাধ্যমে আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে আটকে রাখে এবং জোর করে আপত্তিকর অবস্থার ছবি তোলে। এভাবে চাপ দিয়ে আর্থিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়।”
তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড এবং আশপাশের অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যার সম্পূর্ণ কারণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
লাশ উদ্ধারের পরিস্থিতি:
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে রাস্তার পাশে রাখা দুটি ড্রামের একটি থেকে কালো পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় লাশের ২৬টি খণ্ড উদ্ধার করা হয়। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে আশরাফুলের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া:
উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। বৃদ্ধ মা এছরা খাতুন ছেলের লাশের ছবি দেখে বিলাপ করেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, বন্ধু জরেজ দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর দেড় মাস আগে দেশে ফেরেন। সম্প্রতি জাপানে যাওয়ার জন্য জরেজ আশরাফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা চাইতে থাকে।
স্থানীয়দের মন্তব্য:
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম বলেন,
“আশরাফুল আগে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করত। পরে গ্রামে ফিরে জমিজমা কেনাবেচার কাজ শুরু করে। খুব ভালো ছেলে ছিল। কেন এমন হলো, বুঝতে পারছি না।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহফুজার রহমান জানিয়েছেন, আশরাফুল গত সোমবারই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করেন।
পুলিশি নজরদারি ও রহস্য:
ঘটনার দিন রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ছিল। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার রায়ের দিন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অনলাইনে ‘লকডাউন কর্মসূচি’ ঘোষণা করায় জাতীয় ঈদগাহ ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর ছিল। এই পরিস্থিতিতেও দুটি ড্রাম রেখে দেওয়া ঘটনাকে পুলিশ রহস্যজনক মনে করছে।