গাজা উপত্যকায় তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যেই ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ড্রোন। মঙ্গলবার (২৪ জুন) গাজার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে চালানো এই হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে।
গাজার হাসপাতাল সূত্রে আল-জাজিরাকে জানানো হয়, এসব হামলায় ৫০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি গাজা জুড়ে আরও ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বার্তা সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, গাজার মধ্যাঞ্চলের সালাহউদ্দিন সড়কে ওয়াদি গাজার দক্ষিণে একটি ত্রাণকেন্দ্রে হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত ও ১৪০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে আল-আউদা হাসপাতাল এবং খান ইউনুসে নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে আহতদের মৃতদেহ ও রক্তাক্ত দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, ‘‘আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এমন ভিড় ও অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে যে, অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘‘ত্রাণবাহী ট্রাকের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের ওপর গুলি চালানো হয়। পালাতে চাইলেও ড্রোন ও ট্যাংক থামেনি। এটি ছিল এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ।’’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ঘটনার তদন্তের কথা জানিয়ে দাবি করেছে, সেনাদের দিকে সন্দেহভাজনদের এগিয়ে আসার প্রেক্ষিতে তারা গুলি চালায়।
এই হামলাগুলোর পেছনে বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর বিতরণ কার্যক্রমকে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখছেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত এই সংস্থা চলতি বছরের মে মাস থেকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘এটি একটি অপমানজনক, অমানবিক ব্যবস্থা। এটি এক ধরনের মৃত্যু-কূপ, যা বাঁচানোর বদলে আরও বেশি প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’’
জাতিসংঘ এ বিতরণ ব্যবস্থাকে সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, এটি মানবিক প্রয়োজন নয়, বরং ইসরায়েলি সামরিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জিএইচএফ-এর বিতরণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪০০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এই বিতরণ ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে সোমবার ১৫টি মানবাধিকার সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় বেসরকারি সামরিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত