ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা আরও তীব্র হয়েছে। এতে অন্তত ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৩৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে ইসরায়েল আরও বৃহত্তর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ওই স্কুলের আঙিনায় অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু ফিলিস্তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং আল জাজিরা যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, শেখ রাদওয়ানের একটি ভবনের ওপর ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা স্থানীয়দের আতঙ্ক বাড়ায়।

এ ছাড়া গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে আল-আহলি হাসপাতালের একটি চিকিৎসা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অনাহার ও অপুষ্টিতে নতুন করে দুজন মারা গেছেন, যার মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। এ নিয়ে দুর্ভিক্ষ-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৩–এ, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। ইসরায়েলি বোমা হামলা ও সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকারী দলগুলো তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেঙে ইসরায়েল আবারও সামরিক অভিযান শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৭১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৫ হাজার ৩২৪ জন আহত হয়েছেন।

শুধু তাই নয়, মানবিক সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন হামলায় নিহত হয়েছেন ২৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩৩ জন। ২৭ মে থেকে এ ধরনের হামলায় ২ হাজার ৬০ জন নিহত ও ১৫ হাজার ১৯৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, হামাস যদি যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের শর্তে সম্মত না হয়, তবে গাজার বৃহত্তম শহর ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

গত মার্চ থেকে ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ গাজার প্রায় ২৪ লাখ মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এতে দুর্ভিক্ষ, ব্যাপক রোগব্যাধি এবং জরুরি সেবাগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজার ২৬৩ জন নিহত এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল।