ইসরায়েলের লাগাতার বিমান ও স্থল হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। শুধু বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৫ জন। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে গাজা সিটির পাড়া-মহল্লা। আতঙ্কে মানুষ ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন, কিন্তু উপত্যকার কোথাও নেই নিরাপদ আশ্রয়। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) গাজা সিটিকে আখ্যা দিয়েছে “আতঙ্কের নগরী” হিসেবে।
তাল আল-হাওয়া এলাকায় একটি তাঁবুতে হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা একটি শিশু স্যান্ডেল। বেঁচে যাওয়া ফিলিস্তিনি নারী ইসরা আল-বাসুস জানান, তাঁবুতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ বোমা পড়লে তাঁর শরীরে টুকরো লাগে এবং সন্তানরা আতঙ্কে চিৎকার শুরু করে।
গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল নিশ্চিত করেছেন, তুফাহ এলাকায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। শুজাইয়ায় আবাসিক ভবনে হামলায় নিহত হয়েছেন দুইজন, আর জেইতুনে একটি পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদের ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছেন, কিন্তু যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণ থামছে না। শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রিতদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালগুলোতে মৃত ও আহতদের ঢল নেমেছে। আল-শিফা হাসপাতালের মর্গে জায়গা না থাকায় লাশ রাখা হচ্ছে মেঝেতে। নিহত এক শিশুর মা বিলাপ করে বলছিলেন, “আমাকে ফেলে কোথায় গেলে, বাবা? কেন?”
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ মানুষ গাজার ভেতরে আটকা পড়েছেন। ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, “এটি এখন ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরী।”
ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, তারা গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং আরও অভিযান চালানো হবে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি জানিয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্রে জেইতুন এলাকায় অন্তত ৫২টি সামরিক যান মোতায়েন দেখা গেছে।
উত্তর গাজা থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া মানুষদের দুর্দশা বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলেও। খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া গর্ভবতী নারী শুরুক আবু ঈদ বলেন, “এখানে নেই কোনও গোপনীয়তা, নেই শান্তি।”
একই দিনে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত হয়েছেন সাতজন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। রাফাহতে ত্রাণ নেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি চালালে আরও সাতজন প্রাণ হারান।
ক্রমাগত হামলায় বিধ্বস্ত হচ্ছে গাজার নগর-গ্রাম। ফিলিস্তিনিরা যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই মৃত্যু ও ধ্বংস তাদের পিছু নিচ্ছে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত