জেনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি নতুন ধরনের ইমিউনোথেরাপি ক্যানসার রোগীদের আয়ু গড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যানসার সম্মেলন, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অনুষ্ঠিত American Society of Clinical Oncology (Asco)–এর বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশিত এক বৈশ্বিক গবেষণায় এই যুগান্তকারী সাফল্য তুলে ধরা হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতির নাম কার টি-সেল থেরাপি (CAR T-cell Therapy)। এতে রোগীর শরীরের নিজস্ব টি-সেল (এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা) সংগ্রহ করে জেনেটিক পদ্ধতিতে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যেন তারা ক্যানসার কোষকে শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে। এরপর এসব কোষ পুনরায় রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যা সরাসরি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে।
রক্তের ক্যানসারে এই থেরাপি আগে থেকেই সাফল্য পেয়েছিল। এবার প্রথমবারের মতো কঠিন টিউমার (সলিড ক্যানসার) রোগীদের ওপর এর র্যান্ডমাইজড ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। গবেষণায় মূলত পেটের ক্যানসার এবং গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল জংশন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি ক্যানসার হাসপাতালের গবেষকরা জানান, কার টি-সেল থেরাপি গ্রহণকারী রোগীরা গড়ে ৭.৯ মাস বেঁচে থাকেন, যেখানে প্রচলিত চিকিৎসায় রোগীরা গড়ে ৫.৫ মাস বাঁচেন। এছাড়া, নতুন করে ক্যানসার না বাড়ার সময়কাল (Progression-Free Survival) এই থেরাপিতে ৩.৩ মাস, যেখানে প্রচলিত চিকিৎসায় তা মাত্র ১.৮ মাস।
এই গবেষণাপত্র The Lancet সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এবং শিকাগো সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. অ্যান্ডি ওয়াং বলেন, “এটি চিকিৎসার নতুন সম্ভাবনা খুলছে। আগের চিকিৎসায় ব্যর্থ হওয়া রোগীরাও উপকৃত হচ্ছেন।”
এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত আরেকটি গবেষণা বলছে, কার টি-সেল থেরাপি মস্তিষ্কের ভয়ঙ্কর ক্যানসার গ্লিওব্লাস্টোমা-তেও কার্যকর হতে পারে।
নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অনকোলজিস্ট ড. জন হানেন বলেন, “এই সাফল্য চিকিৎসার নতুন প্রজন্মের সূচনা করছে।” ক্যানসার রিসার্চ ইউকে-এর গবেষণা পরিচালক ড. ক্যাথরিন এলিয়ট জানান, “প্রাথমিকভাবে যাদের চিকিৎসার আর কোনো বিকল্প ছিল না, তাদের জন্য এটি নতুন আশার আলো হতে পারে। তবে ব্যাপক প্রয়োগের আগে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা ভবিষ্যতে কোটি কোটি ক্যানসার রোগীর জীবনে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন আনতে পারে।
সূত্র: গার্ডিয়ান