ইসলামে প্রথম পর্যায়ের ফরজ আমলগুলোর পরই হালাল রিজিক অন্বেষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “হালাল রুজি সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অনিবার্য” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১০/৩৭৭)। ইসলামি অর্থনীতির নীতিও বলছে—যেমন প্রয়োজনীয় ইলম অন্বেষণ করা ফরজ, তেমনি প্রয়োজনীয় সম্পদ উপার্জন ও অনুসন্ধান করাও ফরজ (কিতাবুল কাসব : ৭১)। অন্য হাদিসে এসেছে—হালাল রিজিক অন্বেষণ ইসলামের প্রাথমিক ফরজ আমলগুলোর পর দ্বিতীয় পর্যায়ের ফরজ আমল (কানযুল উম্মাল : ৯২৩১)।
হালাল উপার্জন করা ফরজ হলেও দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি নিষিদ্ধ। যেমন—দোকান চালানোর মাঝেই নামাজের সময় হলে দোকান বন্ধ করে মসজিদে যাওয়া দুনিয়ার আসক্তি নয়; কিন্তু ব্যবসায় এত মগ্ন থাকা যে নামাজের সময়ই মেলে না, সেটাই আসক্তি। ওলামায়ে কেরাম বলেন—ব্যবসা করা ফরজে কেফায়া, তবে সম্পদের প্রতি আসক্তি হারাম (খুতুবাতে হাকিমুল উম্মত : ৮/১৯৭)।
নিয়ত শুদ্ধ রাখা
ব্যবসা বা চাকরির মূল নিয়ত হবে নিজের ও পরিবারের হক আদায় এবং মানুষের সেবা করা, সর্বোপরি রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসারে রিজিক অন্বেষণের ফরজ আমল পালন করা। এমন নিয়ত থাকলে আয় না হলেও তা পরকালের রিজিক হবে।
ইসলামি বিধান মেনে উপার্জন
উপার্জন অবশ্যই হালাল পথে হতে হবে। হারাম উপার্জন থেকে দ্রুত সরে আসা জরুরি। এমনকি হালাল ব্যবসাতেও যেন লুকায়িত হারাম না ঢোকে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। মুফতি তাকি উসমানি বলেন—যে হারাম থেকে নিজেকে বাঁচাতে সচেষ্ট থাকে, আল্লাহ তাকে সরাসরি জান্নাত দান করবেন; নফল ইবাদত হারাম উপার্জনের বিকল্প হতে পারে না (ইসলাহি খুতুবাত : ১০/১৭৪)।
হালাল পেশার মর্যাদা দেওয়া
আল্লাহর দানকৃত হালাল পেশাকে ছোট করে দেখা যাবে না। বিনা কারণে পেশা ত্যাগও ঠিক নয়, তবে শরিয়তসম্মত কারণ থাকলে পরিবর্তন করা যাবে। রাসুল (সা.) বলেন—“যাকে কোনো মাধ্যমে রিজিক দেওয়া হয়, সে যেন তা আঁকড়ে ধরে” (কানযুল উম্মাল : ৯২৮৬)।
নিজ প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট থাকা
রাসুল (সা.) বলেন—“আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যে রিজিক রেখেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকো, তাহলে তুমি সবচেয়ে ধনী হয়ে যাবে” (তিরমিজি : ২৩০৫)। প্রকৃত ধনী সে-ই, যে অন্যের কাছে মুখাপেক্ষী নয়। এজন্য দোয়া করতে হবে—আল্লাহ যেন প্রাপ্ত রিজিকে সন্তুষ্টি ও বরকত দান করেন (মুস্তাদরাকে হাকিম : ১/৪৫৫)।
আল্লাহর সিদ্ধান্তে রাজি থাকা
যা রিজিক হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে, তাতে খুশি থাকা এবং অন্যের রিজিক দেখে হিংসা না করা। চেষ্টা করার পরও না পেলে তা আল্লাহর তাকদির হিসেবে মেনে নিতে হবে (তিরমিজি : ২১৪৪)।
উপার্জনে ভারসাম্য রক্ষা
বৈধ পথে যত খুশি আয় করা যায়, তবে তা যেন জীবনের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু না হয়। ব্যবসার ব্যস্ততায় পরিবারের হক, দ্বীনি মাহফিল বা নামাজ যেন অবহেলিত না হয়। হালাল উপার্জন হলেও অতিরিক্ত দুনিয়ামুখী হওয়া ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।