নারী নয়, পুরুষও নয়—এমন এক শ্রেণিকে আমরা প্রায়ই রাস্তাঘাটে নানা অঙ্গভঙ্গি করে চাঁদা তুলতে দেখি। সমাজে অবহেলিত এ শ্রেণিকে ‘হিজড়া’ বলা হয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়া, তৃতীয় বা চতুর্থ লিঙ্গ বলে কিছু নেই। ইসলাম তাদের মানবসন্তান হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অন্যান্য মানুষের মতোই তাদের জন্যও বিধান প্রযোজ্য করেছে। সমাজে হিজড়াদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন—
“নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম সুন্দর আকৃতিতে।” (সুরা তীন : ৪)
পর্যাপ্ত ইসলামি জ্ঞান না থাকা, কুসংস্কার, সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক দুর্বলতার কারণে হিজড়ারা বঞ্চিত ও নিপীড়নের শিকার। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন—
“আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয় ও আমলের দিকে তাকান।” (মুসলিম : ৬৭০৮)
হিজড়া সম্প্রদায়ও আল্লাহর সৃষ্টি। তারা সৃষ্টির সেরা জীবের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবন্ধীদের যেমন শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকে, তেমনি এটিও এক ধরনের ত্রুটি। তবে এর কারণে তাদের মনুষ্যসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। তারা ভালোবাসা, স্নেহ ও মর্যাদার অধিকারী। তাদের প্রতি ঘৃণা, অবজ্ঞা, গালি বা উপহাস করা গুরুতর গোনাহ। কারণ, আল্লাহর সৃষ্টিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা মানে আল্লাহকেই অবমাননা করা।
কোরআনে বলা হয়েছে—
“তিনি (আল্লাহ) যা যেভাবে ইচ্ছে সৃষ্টি করেন।” (সুরা শুরা : ৪৯)
হিজড়াদের ইসলাম নামাজের জামাতসহ সব সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। কোরআন-হাদিসে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা আকৃতির ভিত্তিতে মানুষকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। আল্লাহর কাছে সব মানুষই সমান—ত্রুটিহীন বা ত্রুটিপূর্ণ।
হাশরের ময়দানে সবাইকেই জিজ্ঞাসা করা হবে। ইসলামে মানুষের মর্যাদার একমাত্র মানদণ্ড হলো ঈমান ও তাকওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন—
“হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। তারপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে মুত্তাকি।” (সুরা হুজুরাত : ১৩)