
প্রধান সড়কগুলোতে এখন অবাধে চলাফেরা করছে হাজারো অবৈধ অটোরিক্সা। যাত্রীদের জন্য দ্রুত এবং সাশ্রয়ী পরিবহনের সুযোগের নাম ধরে রাখা হলেও, বাস্তবে এরা পরিণত হয়েছে এক আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ট্রাফিক জ্যাম, দুর্ঘটনা এবং কখনো কখনো প্রাণনাশের ঘটনাগুলোতে এই অবৈধ অটোরিক্সাগুলোর অংশ অপরিহার্য।
সরকার অটোরিক্সার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইন প্রণয়ন করলেও, সেগুলোর বাস্তবায়ন খুব কমই চোখে পড়ে। আইন তৈরি করা এক কথা, কিন্তু প্রয়োগ করা আরেক কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আইনের কাগজে থাকলেও সড়কগুলোতে এর বাস্তব প্রভাব চোখে পড়ে না। অবৈধ রিক্সার সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলছে।”
প্রধান সড়কগুলোতে বসতি স্থাপন করে অবৈধ অটোরিক্সা চালকরা প্রায়শই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছেন। অধিকাংশ গাড়ি সঠিক রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলাচল করছে, প্রয়োজনীয় লাইসেন্স, সড়ক নিরাপত্তা মানদণ্ড ও ইনস্যুরেন্স ছাড়াই। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। শুধু সামান্য ধাক্কা বা হঠাৎ থামার কারণেই বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ এলাকায়, যেখানে শিশু ও শিক্ষার্থীরা চলাচল করেন, এই সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
দুর্যোগ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে প্রশাসনের নীরবতায়। মাঝে মাঝে পুলিশ বা প্রশাসন কয়েকটি অবৈধ অটোরিক্সা আটক করলেও তা শুধুমাত্র সাময়িক ব্যবস্থা। কিছুদিনের মধ্যে অবৈধ গাড়িগুলো আবার ছড়িয়ে পড়ে। এই কার্যক্রমকে এক ধরণের “ডাম্পিং কারখানা” বলা যায়। প্রতিটি অটোরিক্সা আটক বা ধ্বংসের পর মুহূর্তের মধ্যে নতুন গাড়ি তৈরি হয়। এমনকি গাড়ি তৈরি ও বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন অবৈধ গাড়ি সড়কে নামছে।
বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন করছেন, প্রশাসন কেন এই অবৈধ ব্যবসায় কঠোর হতে পারছে না। অনেকে মনে করছেন, শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়। প্রয়োগে রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক লোভ এবং স্থানীয় গ্যাং বা শক্তিশালী গোষ্ঠীর উপস্থিতি বাধা সৃষ্টি করছে। অনেক সময়ই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক সংযোগের কারণে অবৈধ গাড়িগুলোকে আটকানো সম্ভব হয় না।
দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও হঠাৎ প্রকাশ্যে কোনো আন্দোলন দেখা দেয় না। এই নীরবতা আরও উৎসাহ যোগাচ্ছে অবৈধ চালকদের। দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের তৎপরতা এখনও সীমিত। ফলশ্রুতিতে, প্রাণনাশের ঘটনা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো, আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কেবল আইন নয়, প্রয়োজন কঠোর বাস্তবায়ন। নিয়মিত র্যাব ও পুলিশ অভিযানের পাশাপাশি অটোরিক্সা উৎপাদন কেন্দ্রের ওপর নজরদারি বাড়ানো দরকার। স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজকে একসাথে কাজ করতে হবে। সচেতনতা বাড়ানো, দুর্ঘটনার পরিণতি জনগণকে বোঝানো এবং অবৈধ গাড়ি তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করাই একমাত্র কার্যকর পন্থা।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, অবৈধ অটোরিক্সা শুধুই পরিবহন সমস্যা নয়। এটি একটি সামাজিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক হুমকি। এই নীরব ঘাতককে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে প্রতিদিনই আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনকে এখনই কঠোর অবস্থান নেওয়া ছাড়া জনগণের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply