সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু এই দুই দেশের জন্য নয়, পুরো উপমহাদেশের জন্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়। সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করা, আকাশসীমা বন্ধ, এমনকি সামরিক প্রস্তুতির মতো পদক্ষেপ যুদ্ধের ইঙ্গিত বহন করে—যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করেছে। যদিও হতাহতের কোনো নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি, তারপরও পরিস্থিতির ভয়াবহতা অস্বীকার করার উপায় নেই। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে যদি উত্তেজনা পূর্ণমাত্রায় পৌঁছে যায়, তাহলে তার প্রভাব শুধু সীমান্ত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না; তা ছড়িয়ে পড়বে আন্তর্জাতিক পরিসরেও।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধারণের আহ্বান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি সঠিকভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব শুধুমাত্র অর্থবহ আলোচনা ও পারস্পরিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যুদ্ধ কখনোই স্থায়ী সমাধান এনে দেয়নি। বরং তা শুধু প্রাণহানি, ধ্বংস, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মানবিক সংকট ডেকে আনে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে, সীমান্তে রক্তপাত হয়েছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান কখনোই হয়নি। দুই দেশের জনগণ চায় শান্তি, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কারণে সেই প্রত্যাশা বারবার হতাশায় পরিণত হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তির উচিত নিজেদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে মনোযোগ দেওয়া—not অস্ত্রের ঝনঝনানি ও শত্রুতা বাড়ানো।
এখন সময় এসেছে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সংযম প্রদর্শনের। উসকানিমূলক বক্তব্য, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ কিংবা সামরিক হুমকি দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বরং কূটনৈতিক চ্যানেল পুনরায় সক্রিয় করে, আস্থা গড়ে তুলে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
একটি অবিচ্ছিন্ন সংঘাতময় অঞ্চল থেকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রূপান্তর কেবল তখনই সম্ভব, যখন নেতৃত্ব দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী ভূমিকা গ্রহণ করবে। আমরা আশা করি, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সেই নেতৃত্ব প্রদর্শনে সক্ষম হবে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত