ইসলাম ও আধুনিকতার সম্পর্ক বিষয়টি বহু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকে মনে করেন, ইসলাম একটি প্রাচীন জীবনব্যবস্থা, যা আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মুক্তচিন্তার যুগে অসঙ্গতিপূর্ণ। আবার অনেকে বলেন, ইসলাম একটি চিরকালীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা প্রতিটি যুগ ও বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারে। এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আধুনিকতার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সম্পর্ক।
আধুনিকতা মূলত যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নারীর অধিকার, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইউরোপীয় পুনর্জাগরণ ও শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে আধুনিকতার ধারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসলাম মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান অনুসরণের ওপর গুরুত্ব দেয়। ইসলামে ন্যায়বিচার, জ্ঞানার্জন, মানবসেবা, নারীর মর্যাদা, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন হলো, আধুনিকতার এসব উপাদান ইসলামের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ কি না? ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে দেখা যায়, নবী মুহাম্মদ (সা.) যুক্তিবাদ, মানবিকতা এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি উন্নত সমাজ গঠন করেন। ইসলাম বিজ্ঞানচর্চা, সত্য অনুসন্ধান এবং জ্ঞানার্জনের ওপর জোর দেয়। প্রাচীন মুসলিম বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, দর্শনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখা হয়েছিল। কাজেই মৌলিকভাবে ইসলাম আধুনিক চিন্তাধারার বিরোধী নয়।
তবে, কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং আধুনিকতার নাম করে প্রচলিত কিছু মতবাদ ইসলামের মৌল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নৈতিক শিথিলতা, ধর্মহীনতা বা কেবল ভোগবাদী জীবনদর্শন ইসলাম সমর্থন করে না। এ কারণে কিছু মুসলিম সমাজ আধুনিকতার কিছু দিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক অবস্থান নিয়েছে। ফলে, অনেক সময় ইসলামের নামে আধুনিক শিক্ষা, প্রযুক্তি, গণতন্ত্র বা নারীর অধিকার বিরোধিতা করা হয়েছে, যা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা নয়।
আসল সমস্যা সংঘাত নয়, বরং ইসলামের মূল নীতিগুলোর ভুল ব্যাখ্যা এবং আধুনিকতার কিছু বিপথগামী প্রবণতার কারণে। ইসলাম মূলত মানবকল্যাণের পক্ষে এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন বাস্তবতায় সমাধান দিতে সক্ষম। আধুনিক বিশ্বেও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক ন্যায়, অর্থনৈতিক ভারসাম্য, নারী-পুরুষের সম্মানজনক অবস্থান এবং পরিবেশের সুরক্ষার মতো বিষয়গুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সুতরাং বলা যায়, ইসলাম ও আধুনিকতা পরস্পরবিরোধী নয় বরং পরিপূরক হতে পারে। ইসলাম তার মূল নীতিগুলো অক্ষুণ্ণ রেখে আধুনিক বিজ্ঞানের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, আর আধুনিকতা মানবিক ও নৈতিক সংকট দূর করতে ইসলামের মূল্যবোধ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। তাই সংঘাত নয়, বরং সচেতন সমন্বয় ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এ দুই ধারার মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পারে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত