জাকাতের অর্থ ও তাৎপর্য
জাকাতের আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ও প্রশংসা। কোরআন ও হাদিসে এই চারটি অর্থই উদ্ধৃত হয়েছে। পারিভাষিক অর্থে, জাকাত বলতে ধনীদের ধন-সম্পদের নির্ধারিত অংশ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করাকে বোঝায়। ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত নেসাব পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করার নামই জাকাত (ফিকহুল মুয়াসসার: ১২১)।
জাকাতের গুরুত্ব ও উপকারিতা
জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, বিত্তশালীদের অন্তরকে শুদ্ধ করে এবং দারিদ্র্য দূর করে। এটি উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় ‘জাকাত’-কে ‘সাদাকাহ’ নামেও উল্লেখ করা হয়েছে।
কোরআনের ৮টি মক্কি ও ২২টি মাদানি সূরার মোট ৩০টি আয়াতে ‘জাকাত’ শব্দটি উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ২৭টি আয়াতে ‘সালাত’-এর সঙ্গেই ‘জাকাত’ শব্দটি এসেছে, যা এর অপরিহার্যতা বোঝায়।
জাকাত: ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ
জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি ছাড়া ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন:
"তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ, আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? কেয়ামত দিবসে তাদের কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।" (সুরা বাকারা: ৮৫)
ইসলামে জাকাতের বিধান
প্রত্যেক স্বাধীন ও সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর জাকাত ফরজ। এটি ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। আল্লাহ বলেন:
"তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত দাও। আর যারা রুকু করে, তাদের সঙ্গে রুকু কর।" (সুরা বাকারা: ৪৩)
"তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, এর দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র ও পরিশোধিত করবে।" (সুরা তওবা: ১০৩)
রাসুল (সা.) বলেন:
"ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি—
১. আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, এই সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়েম করা।
৩. জাকাত আদায় করা।
৪. হজ সম্পাদন করা।
৫. রমজানের সিয়াম পালন করা।"
(বোখারি: ৪, মুসলিম: ১৬; মিশকাতুল মাসাবিহ: ৩)
জাকাত আদায়ের নির্দেশনা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা.) মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনে শাসক হিসেবে প্রেরণ করেন এবং বললেন:
"তুমি তাদের আহ্বান জানাবে এই সাক্ষ্য দিতে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তা মেনে নেয়, তবে তাদের জানাবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর প্রতি দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যদি তারা এটিও মেনে নেয়, তবে তাদের জানাবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে এবং গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।"
(বোখারি: ১৩৯৫, মুসলিম: ১৯)
জাকাত শুধু ইবাদত নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ধনীদের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। এটি ধনী ও গরিবের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতএব, প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমের উচিত সময়মতো জাকাত আদায় করা, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা যায়।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত