
নগরীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোমবার (১৭ নভেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। রায় বিটিভি এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
রায় ঘোষণার আগেই শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে দলীয় নেতাকর্মীরা ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকিয়ে দেবে। তার দাবি, তার মায়ের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রায় ‘রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত’, এবং পরিস্থিতি “সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।”
জয় বলেন, “আমরা নির্বাচন হতে দেব না আওয়ামী লীগ ছাড়া। আমাদের প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে নির্বাচন আগে বাংলাদেশে সহিংসতা ঘটবে, মুখোমুখি সংঘর্ষ হবেই।” তিনি আরও জানান, তারা “জানেন রায় কী হবে—দোষী সাব্যস্ত করা হবে, সম্ভবত মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হবে।” তার দাবি, শেখ হাসিনা ভারতে ‘রাষ্ট্রপ্রধানের মতো’ নিরাপত্তায় আছেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র জয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে বিচার পরিচালনা করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই, কারণ দলটি “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকারে অনিচ্ছুক” এবং জবাবদিহির প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো “উত্তেজনা প্রশমন ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
পটভূমি ও সহিংসতা বৃদ্ধি
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নয়া দিল্লিতে নির্বাসনে যান। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়—যা ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা। এ পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।
রায়কে ঘিরে ঢাকায় সহিংসতা বেড়েছে। গত কয়েক দিনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার ঘটনা ঘটে। ১২ নভেম্বর শহরে ৩২টি বিস্ফোরণ রেকর্ড করা হয়। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের কর্মীদেরও আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০০-র বেশি বিজিবি সদস্য মোতায়েন, চেকপোস্ট জোরদার এবং জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জয় জানান, তিনি ও তার মা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার মতে, “সারা দেশে হরতাল, বিশাল বিক্ষোভ—এসব আরও বাড়বে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় উন্নয়নের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেলেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধী দল দমন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ নেয়নি, কারণ তাদের বহু নেতা কারাগারে ছিলেন বা নির্বাসনে ছিলেন। এখন পরিস্থিতি উল্টো, দাবি জয়ের—“তিনি ক্ষুব্ধ, রাগান্বিত, হতাশ। আর আমরা যা প্রয়োজন তা করে লড়াই চালিয়ে যাব।”
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply