প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার (৫ আগস্ট ২০২৪) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানে “জুলাই ঘোষণাপত্র” পাঠ করেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবেই এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযোজন করা হবে।
১. মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়।
২. জনগণের ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষা: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
৩-৫. আওয়ামী লীগের শাসনের ব্যর্থতা ও ইতিহাস: ১৯৭২ সালের সংবিধানের দুর্বলতা, বাকশাল প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস এবং ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
৬-১০. ফ্যাসিবাদী শাসনের অভিযোগ: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ফ্যাসিবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১১-১৫. জনগণের প্রতিরোধ ও সংগ্রাম: ছাত্র, শ্রমিক, রাজনৈতিক দলসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে এই শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এসেছে, যার culmination ঘটে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে।
১৬-১৮. গণঅভ্যুত্থানের গতি ও পরিণতি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দমন, হাজারো প্রাণহানি, সামরিক বাহিনীর সমর্থন এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মাধ্যমে শাসন পতনের বিবরণ দেওয়া হয়।
১৯-২১. নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বৈধতা ও জনগণের প্রত্যয়: জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের ইচ্ছাকে বৈধ, যুক্তিসঙ্গত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বলা হয়।
২২-২৫. গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি: নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়।
২৬. টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু ন্যায়বিচার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের কথা বলা হয়।
২৭-২৮. গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি: ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া এবং ঘোষণাপত্রকে ভবিষ্যৎ সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
জুলাই ঘোষণাপত্র ২০২৪ কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, ন্যায়ের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ নির্মাণের রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়েছে।