ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছাতে যাওয়া ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’কে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে আটকে আশদাদ বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। রোববার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। জাহাজে থাকা ১২ জন মানবাধিকারকর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের খ্যাতিমান পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ফ্রান্সের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান। রিমা এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নিজের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জাহাজটি আটক ও যাত্রীদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “সেলিব্রেটিদের বহনকারী সেলফি জাহাজটিকে ইসরায়েলের উপকূলে আনা হয়েছে। ক্রুরা আমাদের হেফাজতে নিরাপদে আছেন। তাদের স্যান্ডউইচ ও পানি দেওয়া হয়েছে। নাটক খতম।”
অন্যদিকে, মানবাধিকারকর্মীরা এই ঘটনাকে ‘অপহরণ’ বলে অভিহিত করেছেন। গ্রেটা থুনবার্গ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী আমাদের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে অপহরণ করেছে। আমি সুইডিশ সরকার ও বিশ্ববাসীকে আমাদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।”
‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে ১ জুন গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। জাহাজে চাল, ময়দা, শিশুখাদ্য, স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ক্রাচ ও কৃত্রিম অঙ্গসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী ছিল। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, জাহাজের মাধ্যমে সরাসরি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোই তাদের লক্ষ্য ছিল।
ইসরায়েল দাবি করেছে, এসব ত্রাণসামগ্রী পরে ‘যথাযথ মানবিক চ্যানেলের’ মাধ্যমে গাজায় পাঠানো হবে। তবে জাহাজ দখলের পর বাহিনী মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি ছবিতে দেখা গেছে, যাত্রীরা হাত তুলে বসে আছেন— যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা অ্যালবানেজ এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “ম্যাডলিনের যাত্রা হয়তো শেষ, কিন্তু মিশন শেষ হয়নি। গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের প্রতিটি বন্দর থেকে সেখানে ত্রাণ পাঠানো উচিত।”
গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে সেখানে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর চরম সংকট দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে রয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ১২ মানবাধিকারকর্মী হলেন— গ্রেটা থুনবার্গ (সুইডেন), রিমা হাসান (ফ্রান্স), ইয়াসেমিন আচার (জার্মানি), ব্যাপতিস্ত আন্দ্রে (ফ্রান্স), থিয়াগো আভিলা (ব্রাজিল), ওমর ফায়াদ (ফ্রান্স), পাস্কাল মৌরিয়েরাস (ফ্রান্স), ইয়ানিস মোহামদি (ফ্রান্স), সুলাইব ওর্দু (তুরস্ক), সার্জিও তোরিবিও (স্পেন), মার্কো ফন রেনেস (নেদারল্যান্ডস), এবং রিভা ভিয়া (ফ্রান্স)।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত