শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং কমার্শিয়াল পেপারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩’-এর ৪১(২)(ঘ) ধারার ক্ষমতাবলে জারি করা এই সার্কুলার ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে তাদের বিনিয়োগজনিত ক্ষতির বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ সংস্থান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, বন্ড বা ডিবেঞ্চারের বাজারমূল্য যদি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম হয়, তাহলে সেই পার্থক্যকে ‘বিনিয়োগজনিত ক্ষতি’ হিসেবে ধরে সমপরিমাণ অর্থ সংস্থান হিসেবে রাখতে হবে। প্রতিটি তহবিলের জন্য পৃথকভাবে এই হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে।
তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে। নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে শেয়ারের নিট সম্পদ মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য কম হলে, ক্ষতির পরিমাণই সংস্থান হিসেবে রাখতে হবে।
যেসব কোম্পানি টানা তিন বছর ধরে মুনাফা করেনি, নিরীক্ষিত হিসাব নেই, কিংবা অস্তিত্ব নেই—সেসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ সংস্থান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।
অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বন্ড, ডিবেঞ্চার বা নন-কনভার্টিবল প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করে এক বছরের মধ্যে সুদ বা লভ্যাংশ না পেলে:
প্রথম বছর শেষে ২৫%,
দ্বিতীয় বছর শেষে ৫০%,
এবং তৃতীয় বছর শেষে ১০০% সংস্থান রাখতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি বন্ড বা ডিবেঞ্চার যদি মেয়াদ শেষে মূলধন ফেরত না দেয়, তাহলে পরবর্তী হিসাব বছরে ১০০% সংস্থান রাখতে হবে।
অন্যদিকে, যেসব বিনিয়োগে ছয় মাস বা তার বেশি সময় সুদ অনাদায়ি রয়েছে, সেগুলোকে ‘সন্দেহজনক’ বা ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ শ্রেণিতে শ্রেণিভুক্ত করে যথাক্রমে ৫০% ও ১০০% সংস্থান রাখতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগ থেকে নগদ লভ্যাংশ না পেলে তা আয় হিসেবে গণ্য করা যাবে না। মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগসংক্রান্ত ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্দেশনাগুলোও বহাল থাকবে। তবে প্রয়োজন হলে নতুন নির্দেশনার আলোকে সেগুলো সংশোধন করে মানতে হবে।
ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছর মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর শেষে সংস্থানসংক্রান্ত প্রতিবেদন হার্ডকপি ও সফটকপি আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতেও এসব তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অনেক সময় এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে প্রকৃত আয় না আসলেও কিছু প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে মুনাফা দেখায়, যা আর্থিক প্রতিবেদনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই নতুন এ নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো—ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা প্রতিফলিত করা, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করা।