
সকালে স্বাভাবিকভাবে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান স্কুলশিক্ষক এ জেড আজিজুল ইসলাম। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন স্ত্রীর কোনো সাড়া নেই এবং দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। নিজের চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই তার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দৃশ্য—ড্রয়িংরুম থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত পুরো ফ্ল্যাট রক্তে ভেজা। দরজার পাশেই গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছে তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। আর রান্নাঘরের পাশের করিডোরে পড়ে আছে স্ত্রী লায়লা আফরোজের (৪৮) রক্তাক্ত মরদেহ।
প্রতিবেশীদের সহায়তায় নাফিসাকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দু’জনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
ঘটনা সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি চাকু উদ্ধার করেছে।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বাসার খণ্ডকালীন গৃহকর্মী আয়েশা (২০) হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। সকালেই স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। বের হওয়ার সময় বাসা থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ভর্তি একটি ব্যাগও নিয়ে যান। আয়েশাকে ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. ইবনে মিজান বলেন, “আমাদের ধারণা গৃহকর্মীই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। রান্নাঘর থেকেই হামলা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দেয়াল ও রান্নাঘরের সবজি রক্তে ভেজা।”
তিনি আরও জানান, আয়েশা বের হওয়ার সময় একটি রিকশায় ওঠেন। সেই রিকশাটি শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গত চারদিন ধরে ওই ফ্ল্যাটে কাজ করছিলেন আয়েশা। তার বাড়ি রংপুরে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ঘটনা ঘটিয়ে তিনি পালিয়ে যান।
ডিবির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ রাকিব খান বলেন, “মাত্র চার দিন কাজ করে কেন তিনি এমন ঘটনা ঘটালেন—এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাকে গ্রেপ্তারে একাধিক দল কাজ করছে।”
ফ্ল্যাটের নিরাপত্তাকর্মী ইসমাইল হোসেন জানান, আয়েশা সকাল ৭টা ১৩ মিনিটে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন এবং ৯টা ৪৫ মিনিটে স্কুল ড্রেস পরে বের হন। নিজেকে ‘মেহমান’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, নিরাপত্তাকর্মী খালেক চারদিন আগে আয়েশাকে কাজের জন্য ওই বাসায় পরিচয় করিয়ে দেন। খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় নেমে এসেছে আতঙ্ক। পরিবার ও প্রতিবেশীরা দ্রুত দোষীর গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply