
দেশে প্রথমবারের মতো রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে জাতীয়ভাবে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে এই কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে একটি ডোজ টিকা দেওয়া হবে। মাসব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
টিকা গ্রহণের জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে। এ নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ১ আগস্ট থেকে।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) সূত্রে জানা গেছে, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন দেশের স্কুল ও মাদরাসাগুলোতে ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারগুলোতে এই টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
এক ডোজের ইনজেকটেবল এই টাইফয়েড টিকা তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে। টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের পুরো প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) ও ইউনিসেফ।
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যান। এর অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায়।
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (GBD) ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৮ জন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ২৯০ জন আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৬১ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। ফলে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী হলো শিশু।
টার্গেট গ্রুপ: ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশু
মোট লক্ষ্য: ৪ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০৪ জন শিশু
টিকার নাম: টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)
প্রতি ভায়ালে ডোজ: ৫ ডোজ
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান: বায়োলজিক্যাল ই লিমিটেড, ভারত
ডোজ: প্রতি শিশুর জন্য ১ ডোজ (০.৫ মিলি)
প্রয়োগ পথ: মাংশপেশীতে
নিরাপত্তা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত, নিরাপদ ও কার্যকরী
সময়কাল: ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর
প্রথম দুই সপ্তাহ (১২–৩০ অক্টোবর): শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে (যে কোনো ১০ কর্মদিবস)
পরবর্তী দুই সপ্তাহ (১–১৩ নভেম্বর): কমিউনিটিতে (গ্রাম ও শহরে নিয়মিত ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে) (যে কোনো ৮ কর্মদিবস)
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শতভাগ শিশুর টিকাদান নিশ্চিত করা। মানুষ যেন ভুল ধারণায় না ভোগে, সেজন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সবচেয়ে সফল কর্মসূচি হলো টিকাদান কর্মসূচি। টাইফয়েডের টিকাও ভবিষ্যতে রেগুলার টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।”
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply