ফ্রান্সে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নতুন মাত্রা পেয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজারো তরুণ সড়কে নেমে আসেন। “ব্লোকঁ তু” (সবকিছু অচল করে দাও) কর্মসূচির আওতায় তারা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি, অগ্নিসংযোগ এবং সড়ক অবরোধ করেন। এতে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে।
ফরাসি গণমাধ্যম লো মঁদ জানিয়েছে, বিক্ষোভ শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুলিশ অন্তত ২০০ জনকে আটক করে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, আটককৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। দেশজুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়ন শুরু করলে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে গত সোমবার পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া বায়রু পদত্যাগ করেন। পরদিন মাখোঁ তাঁর ঘনিষ্ঠ সেবাস্টিয়ান লোকনুকে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন। বুধবার লোকনু দায়িত্ব গ্রহণের দিনেই দেশজুড়ে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করছেন, মাখোঁ জনগণের দাবি উপেক্ষা করেছেন। তাদের মতে, সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা একজন বামপন্থী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়াই ছিল যৌক্তিক পদক্ষেপ। কিন্তু ঘনিষ্ঠজনকে প্রধানমন্ত্রী করার মাধ্যমে তিনি জনগণের প্রত্যাশা ভঙ্গ করেছেন।
প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড তৈরি করে আগুন ধরিয়ে দেন। কোথাও রেললাইনের বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনে-তে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো বলেন, “এই বিক্ষোভ পরিকল্পিত। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে।” তাঁর দাবি, গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতে জড়াতে রাস্তায় নেমেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বামপন্থী রাজনীতিবিদদের একটি অংশ আন্দোলনকারীদের মদদ দিচ্ছে এবং অনলাইনে সমর্থন গড়ে তুলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
লো মঁদ জানায়, আন্দোলনের পেছনে কোনো আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘবদ্ধ হয়ে তরুণেরা রাস্তায় নেমেছেন। তারা শুধু মাখোঁর ব্যয় সংকোচন নীতির বিরোধিতা করছেন না, বরং শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক বৈষম্যসহ নানা ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ফরাসি রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন—শুধু কঠোর পুলিশি পদক্ষেপে কি বিক্ষোভ থামানো সম্ভব, নাকি মাখোঁ প্রশাসনকে জনগণের দাবির প্রতি সাড়া দিতে হবে।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত