কুষ্টিয়ার তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান সোহাগ আদা চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। খাঁড়ারা ব্লকের নওদা খাঁড়ারা গ্রামে তিনি সাত হাজার বস্তায় আদা চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সারিসারি বস্তায় সুসজ্জিত আদার গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠেছে।
সোহাগ মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের নওদা খাঁড়ারা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় কর্পোরেট মানবসম্পদ কর্মকর্তা ও কমপ্লায়েন্স অডিটর হলেও কৃষির প্রতি গভীর আগ্রহ থেকেই তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমণের সময় কৃষির নানা প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর নিরাপদ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক বিপণনের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হিসনা এগ্রো ফুড, যা বিসিক-এর নিবন্ধনসহ বিএসটিআই ও আইএসও সনদ অর্জন করেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মিরপুর উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত কৃষি প্রযুক্তি মেলায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ময়নুল ইসলামের কাছ থেকে বস্তায় আদা চাষের ধারণা পান তিনি। একই দিনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মতিয়র রহমানের উৎসাহে চাষের সিদ্ধান্ত নেন।
উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান সোহাগ জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের সহযোগিতায় তিনি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থেকে উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। ভালো ফলন দেখে আগামী বছর ৫০ হাজার বস্তায় আদা চাষের লক্ষ্য স্থির করেছেন। প্রতি বস্তায় গড়ে ৭০ টাকায় দেড় কেজি পর্যন্ত আদা উৎপাদন সম্ভব। সাত হাজার বস্তায় চাষ প্রকল্প স্থানীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কৃষি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও লাভজনক পেশা। খোরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরে আব্দুর রহমান সোহাগের মতো শিক্ষিত উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তারা ঝুঁকি নিয়ে এমন অর্থকরী ফসল চাষ করছেন, যা আগে আমদানি করতে হতো।
যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর সুফল হিসেবে আব্দুর রহমান সোহাগ এখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় থাকা সোহরাব হোসেন জানান, বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক ও টেকসই উদ্যোগ যা অনাবাদী ও কম আলো পাওয়া জমিতেও সফলভাবে করা যায়।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এ প্রকল্প শুধু স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন নয়, তরুণদের কৃষি উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতে কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন—যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন, খাঁড়ারা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল ইসলাম ও মোঃ মকিবুল ইসলাম।
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত