
হাড়ক্ষয় রোগ বা অস্টিওপরোসিস হলো একটি নীরব কিন্তু ধীরে ধীরে হাড়কে ক্ষয় করে ফেলার রোগ, যা প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রাথমিকভাবে সঠিক তথ্য ও সচেতনতার অভাবে অনেকেই অগোচরে ভোগেন। বাংলাদেশে এই রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে বয়সকালে প্রবীণদের মধ্যে।
অস্টিওপরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে সহজেই ভেঙে যায়। সাধারণত কব্জি, কোমর ও কোমর উপরের হাড়ে বেশি দেখা যায়, কিন্তু যেকোনো হাড় আক্রান্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, রোগটি “নীরব ঘাতক” নামে পরিচিত কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে হাড়ে কোনো ব্যথা বা অসুবিধা অনুভূত হয় না। প্রায়ই মানুষ হঠাৎ পড়ে গেলে বা হালকা ধাক্কায় হাড় ভেঙে গিয়ে রোগটি বুঝতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাড়ক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যাওয়া। নারীপুরুষ উভয়েই আক্রান্ত হতে পারে, কিন্তু বিশেষ করে র menopausal মহিলাদের হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব, ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবন যেমন স্টেরয়েড ব্যবহার, এবং শারীরিক কার্যক্রমের অভাবও এই রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিরোধই হলো সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও হালকা-weight training করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা এবং প্রয়োজনমতো হাড়শক্তি বাড়ানোর ওষুধ সেবন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব দেন, ৪০ বছরের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করা এবং হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি যাচাই করা উচিত।
বাংলাদেশে হাড়ক্ষয় রোগের বিষয়ে সচেতনতা এখনও খুব সীমিত। বেশিরভাগ মানুষ হাড় ভেঙে গেলে চিকিৎসার জন্যই মনোযোগ দেন, অথচ আগেই ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে একসাথে কাজ করে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
হাড়ক্ষয় রোগ শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও প্রভাব ফেলে। হাড় ভেঙে গেলে ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়, চিকিৎসার ব্যয় বাড়ে এবং পরিবারে মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি হয়। সুতরাং, সময়মতো সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই একমাত্র কার্যকর সমাধান।
বিশেষজ্ঞরা অনুরোধ করছেন, “হাড়কে যত্ন করুন, সুস্থ থাকুন। হাড়ক্ষয়কে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে উপেক্ষা না করে প্রতিরোধ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগকে জয় করা সম্ভব।”
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply