
যশোর শহরের মাঝেই যেন আরেকটি ছোট্ট শহর — প্রাণচঞ্চল, আলোকিত, আর প্রাণবন্ত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখরিত এই স্থানটি এখন শহরবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। অফিস-আদালতের ব্যস্ততা, যানজট, কিংবা নগর জীবনের ক্লান্তি কাটাতে মানুষ ছুটে আসেন এখানে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে।
প্যারিস রোডে নেই শহুরে কোলাহল বা যান্ত্রিকতার চাপ। আছে বইয়ের লাইব্রেরি, পোশাক ও হস্তশিল্প পণ্য, গৃহস্থালির সামগ্রী, নার্সারি, সারিবদ্ধ গাছগাছালি আর সবুজের সমারোহ— যা মন ভরে দেয় প্রশান্তিতে। চারপাশে হরেক রকম খাবারের পসরা, যেন এক অনন্য খাবারের রাজ্য। সকাল, বিকেল কিংবা রাত— যেকোনো সময়েই এখানে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি খাবারের স্বাদ ও ঘোরাঘুরির আনন্দ।
যশোর শহরের ব্যস্ততম এলাকা প্যারিস রোড— নামকরণটি এসেছে পশ্চিমা দেশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে। স্থানীয়দের ধারণা, রাস্তার দুই পাশের গাছগাছালি, মনোরম সাজসজ্জা ও উন্মুক্ত পরিবেশের কারণে এই সড়কটির সঙ্গে ফ্রান্সের প্যারিস শহরের রাস্তার অনেক মিল আছে বলেই এমন নামকরণ। শহরের প্রাণকেন্দ্র কোর্ট মোড় ও ঈদগাহ পেরিয়ে আল্লাহু চত্বর ধরে এগোলেই দেখা মিলবে রাস্তার মাঝ বরাবর সারি সারি গাছের মনোরম দৃশ্য। রাস্তার এক পাশে বইয়ের লাইব্রেরি, অন্য পাশে খাবারের দোকান— মিলেমিশে যেন এক উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র।
দিনের যেকোনো সময়েই প্যারিস রোডে মানুষের আনাগোনা থাকলেও শেষ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে জমে ওঠে মানুষের ভিড়। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পুরো এলাকা থাকে আলো, সঙ্গীত ও কথোপকথনের সরবতায় ভরপুর। শহরের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন কর্মব্যস্ত দিন শেষে একটু শান্তি খুঁজে পেতে।
রাতের বেলায় আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। রাস্তার দু’ধারে দেশি-বিদেশি খাবারের পসরা— চটপটি, ফুচকা, মোমো, পিঠা, রসগোল্লা, বার্গার, স্যুপ, কেক, জুস, কোমল পানীয়— সবই পাওয়া যায় এখানে। নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি ঘরোয়া খাবারও আকৃষ্ট করছে ক্রেতাদের।
উঠতি উদ্যোক্তাদের জন্য প্যারিস রোড এখন এক সফলতার মঞ্চ। খাবারের দোকান, হস্তশিল্প, পোশাক ও নানা পণ্যের ব্যবসা করে অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
উদ্যোক্তা চায়না খাতুন বলেন, “মানুষই প্যারিস রোডের প্রাণ। এখানে আমার মতো অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। অনেক নারী উদ্যোক্তা আজ স্বাবলম্বী।”
বাংলা খাবারের হোটেল ‘জলখাবার’-এর সত্ত্বাধিকারী ভক্ত বিশ্বাস জানান, “সকাল ছয়টা থেকে রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। শহরের অন্য কোথাও হয়তো এত গ্রাহক বা সাফল্য পেতাম না।”
সাংস্কৃতিক কর্মী সেলিম রেজা বলেন, “মনোরম পরিবেশে নানান খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ থাকে— তাই প্যারিস রোডে আসতে ভালো লাগে। নামের মতোই প্যারিসের ছোঁয়া আছে এখানে।”
শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে দু’বার আসি। শহরের পার্কগুলো সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু প্যারিস রোডে রাত অবধি সময় কাটানো যায়।”
ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, “শুরুর পরিবেশ এখনো ভালো, তবে দোকান বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া।”
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply