
নড়াইলের কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান শুধু ক্যানভাসে রঙই এঁকেননি, তিনি এঁকেছেন বাংলার মানুষ ও মাটির আত্মাকে। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সকাল ৬টায় সুলতান কমপ্লেক্সে পবিত্র কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সকাল সাড়ে ৭টায় ‘শিশুস্বর্গ’-এ। সকাল সাড়ে ৯টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও পৌনে ১০টায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী এবং সাড়ে ১০টায় পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে লাল মিঞা নামে জন্মগ্রহণ করেন এস এম সুলতান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন এবং দ্রুতই শিক্ষকদের নজর কাড়েন। ১৯৪৪ সালে তৃতীয় বর্ষে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে তিনি কাশ্মীর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ নানা দেশে চিত্র প্রদর্শন করেছেন।
সুলতানের তুলিতে ফুটেছে বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার—মাটির মানুষরা; মাঠ, নদী, জঙ্গল, হাওর, বাঁওড়—সবুজ প্রান্তর জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর ক্যানভাসে। দেশে ফেরার পর ১৯৫৫-৫৬ সালে নড়াইলে প্রতিষ্ঠা করেন “ফাইন আর্ট স্কুল” ও শিশুদের জন্য ‘শিশুস্বর্গ’।
তিনি নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন ৬০ ফুট দীর্ঘ ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নৌকা, যেখানে শিশুদের নিয়ে নদীতে চিত্রাঙ্কনের পাঠ দেন। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি সুলতান ছিলেন বাঁশির ওস্তাদ ও প্রাণীবিশারদ, নিজের মিনি চিড়িয়াখানায় নানা প্রাণী পালন করতেন।
১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা লাভ করেন। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে নড়াইলে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।
দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভুগে ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি এবং নিজ বাড়ির আঙিনায় সমাহিত হন। চিরকুমার, অসাম্প্রদায়িক ও মানবপ্রেমী এই শিল্পী বাংলার মানুষের মুখ ও মাটির রঙে ভরা অমর চিত্রজগত রেখে গেছেন।
আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে নড়াইলের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বাঁশির সুর—সুলতানের শিল্পের অমলিন সঙ্গীত।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply