শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দাওধারা কাটাবন এলাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িবহরে সোমবার (২৫ মে) দুপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় অন্তত ছয়জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন গারো পাহাড় সংলগ্ন বনভূমিতে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে বন বিভাগের আপত্তির কারণে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শনে যান এবং স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “এই বনভূমিতে কোনো পর্যটন কেন্দ্র হবে না। বরং এখানে বন্যহাতির জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হবে।”
তার এই ঘোষণায় বনভূমির পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং উগ্র জনতা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
এই হামলায় এখন টিভির সাংবাদিক জাহিদুল খান সৌরভ, সময় টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট বাবু চক্রবর্তী, বাংলা টিভির নাঈম ইসলাম এবং বাংলাদেশের খবর পত্রিকার শাহরিয়ার শাকিরসহ মোট ছয়জন সাংবাদিক আহত হন।
বন বিভাগের তথ্যমতে, শেরপুরের গারো পাহাড় ঘেঁষা তিনটি উপজেলার প্রায় ২১ হাজার একর বনভূমির মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ ভূমি বর্তমানে দখলদারদের কবলে রয়েছে। সম্প্রতি ওই অঞ্চলের ২২৩ একর খাস জমিতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩২ একর এলাকা সংরক্ষিত পাথর মহাল হিসেবে চিহ্নিত। বন বিভাগের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি আপাতত স্থগিত রয়েছে।
ঘটনার পর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এই বনভূমি আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে পর্যটনের নামে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। এখানে বন্যহাতির জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হবে, যা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে। শেরপুর প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।