উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় মঙ্গলবার রাতেই অন্তত তিনটি অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে পড়ে। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলার ছয় হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে এবং বিকাল তিনটার মধ্যে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রাতের মধ্যেই হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধবুনী গ্রাম এবং ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের পুব ও উত্তর ডাউয়াবাড়ীর তিনটি অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। তলিয়ে যায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। পানি বাড়তে থাকায় তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো—মোট ৪৪টি জলকপাট খুলে দিতে বাধ্য হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বুধবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, বাঁধ ভেঙে তার ইউনিয়নের দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, তলিয়ে গেছে ধান ও সবজির ক্ষেত।
পাটগ্রামের দহগ্রাম চর এলাকার বাসিন্দা মহাসিন আলী বলেন, “সন্ধ্যার পর থেকেই পানি বাড়তে থাকে, রাত ৯টার মধ্যেই ঘরে পানি ঢুকে পড়ে।”
চর সিন্দুর্না গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, “এবার পানির চাপ আর স্রোত দুটোই অনেক বেশি। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, ঘরে পানি ঢুকছে হু হু করে।”
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা রাতভর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সমন্বয়ে বালির বস্তা প্রস্তুত করে বাঁধ রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে, পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণও চলছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “এখনো বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জলকপাট খোলা হয়েছে।”
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে জরুরি খাবার ও ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।”
চেয়ারম্যানঃ এম এস চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকঃ মোঃ এম রহমান, ঠিকানাঃ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত