আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন। জীবনের এই নির্ধারিত সময় হলো তার জন্য কাজ করার, আমল করার এবং প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। এরপর সে অবশ্যই তার রবের সঙ্গে মিলিত হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “হে মানুষ! তোমাকে তোমার পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে। অতঃপর তাঁর সাক্ষাৎ ঘটবে।” (সুরা ইনশিকাক: ৬)
এই দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মানুষ যত বয়সই অর্জন করুক না কেন, মৃত্যুকে এড়ানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটি নিঃশ্বাস আমাদের জীবনের সমাপ্তির দিকে এগিয়ে দেয়। বয়স যত বাড়ে, মৃত্যু তত কাছে চলে আসে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে দুনিয়াবি লালসা ও ফেতনায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলেন, “প্রাচুর্যের লালসা তোমাদের গাফেল রাখে। এভাবে তোমরা কবরে পৌঁছাও।” (সুরা তাকাসুর: ১-২)
দিন-রাত, চন্দ্র-সূর্যের আবর্তন, বছরের পালাবদল আমাদের শেখায় সময় কত দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এসব নিদর্শন দেখে মানুষকে শিক্ষা নিতে বলেছেন আল্লাহ। তিনি বলেন, “আল্লাহ দিনরাতের পরিবর্তন ঘটান। এতে অন্তর্দৃষ্টি-সম্পন্নদের জন্য চিন্তার উপকরণ রয়েছে।” (সুরা নুর: ৪৪) এবং, “প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পথ চলে।” (সুরা ইয়াসিন: ৪০-৪১)
প্রত্যেকটি নতুন বছর আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সময় কমে যাচ্ছে। জীবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর এখনো সুযোগ আছে। আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার দরজা খোলা। যে ব্যক্তি তার সময়কে ভালো কাজে ব্যবহার করে, সে-ই প্রকৃত সফল। রাসুল (সা.) বলেন, “দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ গাফেল: সুস্থতা এবং অবসর।” (বুখারি)
মানুষ ধন-সম্পদ ও দীর্ঘায়ুর লোভে মত্ত থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, “আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায়, তবে দুটি জিনিসে তার লোভ বাড়তেই থাকে—ধন ও বয়স।” (বুখারি)
আল্লাহর আনুগত্য, নেক আমল, হালাল রুজির জন্য চেষ্টা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখাই হচ্ছে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ দুর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন। অতঃপর দুর্বলতার পর শক্তি দেন, তারপর আবার দুর্বলতা ও বার্ধক্য।” (সুরা রুম: ৫৪)
দুনিয়ার জীবন একটি শস্যখেতের মতো, যা অল্প সময়েই শুকিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “জেনে রাখো, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজসজ্জা… এরপর তা শুকিয়ে যায়, খড়কুটো হয়ে যায়।” (সুরা হাদিদ: ২০)
একজন ব্যক্তি যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়, তখন তার মুখমণ্ডলে শুভ্রতার ছাপ পড়ে। এটি একটি সতর্কতা, যে তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। “আমি কি তোমাদেরকে এতটা সময় দিইনি, যাতে চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসেছিল।” (সুরা ফাতির: ৩৭)
রাসুল (সা.) বলেন, “পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটির আগে গনিমত মনে করো—যৌবন, সুস্থতা, সচ্ছলতা, অবসর এবং জীবন।” (সুনানে নাসাঈ)
জীবনের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি—স্বচ্ছলতা, দুর্বলতা, রোগব্যাধি ইত্যাদি আল্লাহর পরীক্ষা। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, জান-মাল ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।” (সুরা বাকারা: ১৫৫)
মানুষ ভুল করে, গোনাহ করে—এটাই তার স্বাভাবিকতা। কিন্তু তওবা করাই মুক্তির পথ। আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে সফল হতে পারো।” (সুরা নুর: ৩১)
রাসুল (সা.) বলেন, “আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না তার মৃত্যুর গড়গড় শব্দ শুরু হয়।” (তিরমিজি)
তওবার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বেশি বেশি নেক আমল করা। রাসুল (সা.) বলেন, “তওবার পরে বেশি বেশি নেকির কাজ করো, কারণ তা গোনাহকে মুছে দেয়।”
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই ভালো কাজ গোনাহ মুছে দেয়।” (সুরা হুদ: ১১৪)
পার্থিব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের একটি সুযোগ, আত্মার পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য। একমাত্র সফল সেই ব্যক্তি, যে এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আল্লাহর আনুগত্যে সময় কাটায়, তওবা করে, নেক আমল করে, এবং নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুত রাখে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন এবং এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দিন। আমিন।