গত দুই দশকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রচুর পোস্ট ও শেয়ার করতেন। তবে এখন সেই প্রবণতা ধীরে ধীরে কমছে। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ব্যবহারকারীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গত বছরের তুলনায় এখন অনেক কম পোস্ট করছেন। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক জেনজিদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
নিউ ইয়র্কারের স্টাফ রাইটার কাইল চায়কা এই প্রবণতাকে ‘পোস্টিং জিরো’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মানুষ আগের মতো অনলাইনে নিজের ব্যক্তিগত জীবন শেয়ার করতে আগ্রহী নয়। তাদের সোশ্যাল ফিডে বন্ধুর বেড়ানোর ছবি বা পরিবারের ছোটখাটো মুহূর্তের পরিবর্তে এখন বেশি ভেসে বেড়ায় ব্র্যান্ড ও ইনফ্লুয়েন্সারের পোস্ট, যা নতুন পণ্য প্রচার বা ট্রেন্ড নিয়ে।
চায়কা ও বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদক ক্যাটি কে একসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন আগের মতো সামাজিক নয়। এটি হয়ে গেছে কেবল বিজ্ঞাপন ও আকর্ষণীয় কনটেন্টের প্ল্যাটফর্ম। চায়কা বলেন, “এতে সামাজিক মাধ্যমের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের পোস্টের জায়গা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা প্রমোটেড কনটেন্টে ঢেকে যাচ্ছে।”
তাদের মতে, সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদমের পরিবর্তনও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত শেয়ারিং কমিয়ে দিয়েছে। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে এখন ভিডিওর সংখ্যা বেড়েছে এবং প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ী কনটেন্ট সাজাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, বন্ধুদের ছোটখাটো পোস্টগুলো ফিডে কম দেখা যায়।
চায়কা ও ক্যাটি মনে করেন, মানুষ ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠভাবে শেয়ার করার দিকে ফিরছে, যেমন মেসেজ বা নির্বাচিত গ্রুপে। চায়কা বলেন, “সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য পোস্টের কোনো প্রেরণা নেই। প্রতিযোগিতা বেশি, মনোযোগ কম, তাই বরং সরাসরি বন্ধুদের সঙ্গে মেসেজ করা ভালো।”
ক্যাটির মতে, তার প্রজন্ম ভেবেছিল তরুণরা সবকিছু অনলাইনে শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা এখন আরও ব্যক্তিগত এবং সীমিত পরিসরে শেয়ার করতে পছন্দ করছেন। চায়কা বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ম বদলে গেছে। ব্যবহারকারীরা বুঝতে পেরেছে যে আগের মতো পোস্ট করার কোনো সুবিধা নেই, তাই ধীরে ধীরে ব্যবহার বদলাচ্ছে।”