ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এদিন কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪৭১ জন প্রার্থী এবং ১৮টি হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ১০৮ জন প্রার্থী। মোট ৮টি কেন্দ্রে ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। প্রচারণার শেষ দিনে প্রার্থীরা ও তাদের সমর্থকেরা টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন ও বিভিন্ন হল এলাকায় লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার শঙ্কা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা নির্বাচনি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ রাখতে ১০ দফা দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট করা, নারী শিক্ষার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ে নারী শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা, পোলিং অফিসার নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ভোট গ্রহণের সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাড়ানো, পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা। এছাড়া বুথের বাইরে লাইন ব্যবস্থাপনায় শিক্ষক-অফিসার নিয়োগ এবং ভুয়া তথ্য ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের গুজবে কান না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গুজব একটি সামাজিক ব্যাধি। ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের এসব গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে ভোট দিতে হবে।’ তিনি আরও জানান, নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে ভোট দেওয়ার চেষ্টা চলছে—এমন তথ্য তাদের কাছে এসেছে। এ ধরনের প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে ভোটারদের পরিচয় যাচাই নিশ্চিত করা হবে এবং ভুয়া ভোটার ধরা পড়লে সরাসরি পুলিশে দেওয়া হবে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা গতকাল কলা ভবনের বটতলায় শপথ নিয়েছেন। তারা নির্বাচিত হলে গণতান্ত্রিক আচরণ, রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শপথবাক্য পাঠ করান ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম। অন্যদিকে নির্বাচনি প্রচারণা শেষে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে থাকা লিফলেট ও পোস্টার সরাতে আজ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবে ছাত্রদল।
ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’-এর জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিন, তবে অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে আসুন। আপনাদের অংশগ্রহণই সব হিসাব পাল্টে দেবে। সবাই ভোট দিলে হারবে স্বাধীনতাবিরোধীরা।’
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। গত ১০০ বছরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৩৭টি নির্বাচন। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরুল হক নুর এবং জিএস নির্বাচিত হন ছাত্রলীগ সমর্থিত গোলাম রাব্বানী।