মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রস্তাবিত বাজেট ও কর বিলকে ‘জঘন্য’ ও ‘অবিশ্বাস্যভাবে অপচয়মূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন টেসলার সিইও এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও এবার ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ একাধিক পোস্টে মাস্ক বলেন, “এই বিলের কারণে বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এর চাপ গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। যারা এই বিলে ভোট দিয়েছে, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।”
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এক মাস আগে অনুমোদিত এ বাজেট ও কর বিলে ট্রিলিয়ন ডলারের করছাড়, প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ এবং ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। মাস্ক মনে করেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও নাগরিকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন মাস্ক। নির্বাচনের পর “ডিওজিই” নামের অর্থনৈতিক পরামর্শক টিমেও কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বিতর্কের কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতি শুরু হয় মাস্কের। টেসলার কিছু বিক্রয়কেন্দ্রে হামলার ঘটনাও ঘটে। এসব কারণে গত ৩১ মে তিনি ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেন। বাজেট বিল নিয়ে এটিই তার প্রথম প্রকাশ্য বিরোধিতা।
মাস্কের এই অবস্থান সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট মাস্কের অবস্থান আগেই জানতেন। প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট জানান, “বিল নিয়ে সমালোচনা থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অবস্থানে অটল। বিলটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট’।”
বিলটির বিতর্কিত অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালের করছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধি, ঋণসীমা বৃদ্ধি, অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারে বরাদ্দ, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো এবং ‘পোর্ক ব্যারেল’ ধাঁচের স্থানীয় প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ।
এই বিলকে ঘিরে রিপাবলিকানদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল স্পষ্টভাবে বলেছেন, ঋণসীমা বৃদ্ধি থাকলে তিনি এর পক্ষে ভোট দেবেন না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “কেন্টাকির মানুষ র্যান্ড পলকে সহ্য করতে পারে না। তার মতামত পাগলামির মতো।”
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, স্বার্থের সংঘাত এড়াতে মাস্কের কোম্পানি স্টারলিংকের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে না।
এই প্রসঙ্গে সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, “ইলন মাস্ক নিজেই যখন বলেন বিলটি জঘন্য, তখন আমাদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই।”
তবে ট্রাম্প ও কংগ্রেসে তার সমর্থকরা চান, আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যেই বিলটি পাস করে আইনে পরিণত হোক। এ অবস্থায় মাস্ক রাজনৈতিক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই বিল যারা সমর্থন করেছে, তারা আমেরিকান জনগণকে প্রতারণা করেছে। আগামী নভেম্বরে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।”
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যয় হ্রাস প্রস্তাবও এসেছে, যেখানে ৯.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই কাটছাঁট মূলত বিদেশি সহায়তা, ইউএসএআইডি, এনপিআর ও পিবিএসের মতো সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমের বাজেট থেকে হবে।