ভ্যারিকোজ ভেইন (Varicose Veins) হলো এমন একটি শিরাসংক্রান্ত সমস্যা, যেখানে শরীরের নিচের অংশে বিশেষ করে পায়ের শিরাগুলো ফুলে ওঠে এবং অনেক সময় ব্যথা বা অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এর প্রধান কারণ হলো শরীরের নিচের দিকে জমে থাকা রক্ত ঠিকভাবে ওপরে না উঠতে পারা। যেহেতু পা শরীরের সবচেয়ে নিচের অংশ, তাই রক্ত তুলে আনার জন্য হৃদপিণ্ডকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে এই সমস্যা আরও বাড়ে।
ভারতীয় চিকিৎসক ডা. সঞ্জয় কালরা জানান, সময়মতো সচেতনতা ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে ভ্যারিকোজ ভেইন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
যারা দীর্ঘসময় বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করেন (যেমন: শিক্ষক, পুলিশ, দর্জি, গাড়িচালক, অফিসকর্মী)
গর্ভবতী নারীরা
বয়স্ক ব্যক্তিরা
স্থূলতার শিকার মানুষ
যাদের পারিবারিক ইতিহাসে শিরাজনিত সমস্যা রয়েছে
১. নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও শরীরচর্চা
দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে পেশি সচল থাকে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।
২. লেগ এলিভেশন (পা ওপরে তুলে রাখা)
রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা সামান্য ওপরে রাখলে নিচের জমে থাকা রক্ত সহজে ওপরের দিকে ফিরে যেতে পারে।
৩. কমপ্রেশন স্টকিং ব্যবহার
বিশেষ ধরনের এই স্টকিং শিরার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলে শিরাগুলো সোজা থাকে এবং ফুলে ওঠে না।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন পায়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা জরুরি।
৫. চা-কফি ও লবণ গ্রহণে সতর্কতা
অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও সোডিয়াম শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা শিরা ফোলার ঝুঁকি বাড়ায়।
ভ্যারিকোজ ভেইনকে সাধারণ সমস্যা মনে করে অবহেলা করা ঠিক নয়। যদি শিরায় ব্যথা, হাঁটার সময় টান, চুলকানি কিংবা ত্বকের রঙ পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার বা লেজার থেরাপির মতো চিকিৎসা গ্রহণ করতেও হতে পারে।
ভ্যারিকোজ ভেইন প্রতিরোধযোগ্য একটি সমস্যা। সচেতনতা, সঠিক অভ্যাস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমেই এই সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিয়মিত চলাফেরা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পায়ের শিরাগুলো সুস্থ ও কার্যকর রাখা যায়।