1. info@www.media71bd.com : NEWS TV : NEWS TV
  2. info@www.media71bd.com : TV :
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন

পাখি শিকারের প্রতিবাদে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সচেতনতা কর্মসূচি

মাহিদুল ইসলাম হিমেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি
  • Update Time : রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

সারা দেশে বেপরোয়া পাখি শিকারের প্রতিবাদে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের ফটোওয়াক ও সচেতনতা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজধানীর অদূরে কলাতিয়া সংলগ্ন নিউভিশন ইকোসিটি এলাকায় ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার, বার্ডওয়াচার এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এ ফটোওয়াক, পাখি দেখা কর্মসূচি ও স্থানীয় মানুষকে সচেতনের আয়োজন।

দেশজুড়ে নির্বিচারে পাখি শিকার এখন দেশের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেই এমন আয়োজন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৃতিপ্রেমীরা ধুপনি বক, নিশিবক, পানকৌড়ি, বিভিন্ন প্রজাতির ওয়ার্বলার, বাবুই, তিলা মুনিয়া, চাঁদিঠোট মুনিয়া, ভুবনচিলসহ ৫০টিরও বেশি পাখির প্রজাতি পর্যবেক্ষণ করেন। একইসঙ্গে সারাদেশে চলমান পাখি শিকার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
পাখি শিকার একটি জাতীয় সংকট উল্লেখ করে আয়োজকরা বলেন, সাদা কপাল হাঁসের মতো পরিযায়ী পাখি থেকে শুরু করে স্থানীয় নিশিবক, ধুপনি বক – কিছুই শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ঢাকা শহরেই যেখানে পাখি নিরাপদ নয়, সেখানে প্রান্তিক অঞ্চলের ভয়াবহতার কথা ভাবতেই শিহরণ জাগে। সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, নাটোর, চট্টগ্রামসহ দেশের সব অঞ্চলে পাখি শিকার মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, এখনই জাতীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে না তুললে পরিবেশগতভাবে দুর্বল বাংলাদেশ আরও দ্রুত ধ্বংসের দিকে যাবে।

বিশ্ব পরিব্রাজক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য তারেক অনু বলেন, ‘বুনো পাখি শিকার করা মানে নিজের ক্ষতি করা। পৃথিবী থেকে যেদিন পাখি বিলুপ্ত হবে সেদিন মানুষও বিলুপ্ত হবে। শিকার বন্ধে এগিয়ে আসুন।’

বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএডব্লিউএ) আহ্বায়ক আদনান আজাদ বলেন, ‘নির্বিচারে পাখি ও প্রাণী হত্যা মানেই প্রকৃতি ধ্বংস করা। দেশীয় ও পরিযায়ী সব পাখিই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ—এদের রক্ষা করা জরুরি।’

ডকুমেন্টারি ‘ঢাকার পাখি: ছোট হয়ে আসছে আকাশ’ নির্মাতা এবং NatSave-এর সাধারণ সম্পাদক আসকার রুশো বলেন, ‘ছোটবেলায় অনেক শিকার দেখেছি, কিন্তু আলোকচিত্রে পাখির সৌন্দর্য দেখার পর বিষয়টি সম্পূর্ণ বদলে যায়। প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে পাখি শিকার মহামারি আকার ধারণ করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ না করলে শিকারীরাই বাংলাদেশ থেকে পাখি শেষ করে দেবে।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, ফটোগ্রাফার তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘প্রতিবছর রংপুর অঞ্চলে অসংখ্য পাখি শিকার হয়, বিষটোপ দিয়েও শিকার করা হয়। শিকার বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সচেতনতা – দুইটিই জরুরি।’

বাংলাদেশ ফিমেল ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার্স অ্যান্ড কনজার্ভেশনিস্ট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মৌসুমী সিরাজ বলেন, ‘পাখির ছবি তুলতে গিয়ে আমরা নানা ধরনের শিকার কার্যক্রম দেখেছি। নারী ফটোগ্রাফাররাও পাখি সংরক্ষণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চান।’

বিবিসিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আরাফাত রহমান বলেন, ‘আইন থাকলেও, এয়ারগান নিষিদ্ধ হলেও শিকার বন্ধ হয়নি। ফাঁদ, জাল, বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার চলছে দেশের আনাচকানাচে। সচেতনতা ও আইনের কার্যকর প্রয়োগ ছাড়া পাখিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।’

সিলেটের ফটোগ্রাফার শামীম খান বলেন, ‘সিলেটের হরিপুর বড় হাওরে প্রতি বছর ২২–২৩ প্রজাতির হাঁসসহ বিরল পাখি আসে, কিন্তু শিকারিরা এসব পাখি মেরে হোটেলে বিক্রি করছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শিকারিদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে।’

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিজ্ঞানী ও ওয়াইল্ড মেন্টরের প্রধান নির্বাহী ড. সাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাখি শুধু আকাশের রঙ নয়, তারা পরিবেশের জীবন্ত বার্তা। পাখির মৃত্যু মানে আমাদের ভবিষ্যৎ নীরব হয়ে যাওয়া। সুস্থ পরিবেশের নির্দেশক পাখি নিধন বন্ধ করতে হবে এখনই।’

আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ফটোগ্রাফার সঞ্জয় কুমার (বদলগাছি, নওগাঁ) বলেন, ‘আমাদের নওগাঁর বিলে এয়ারগান ও কারেন্ট জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত পাখি মারা হয়। সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং পাখির নিরাপদ আবাস পুনর্গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

চুয়াডাঙ্গার Youth for Nature-এর আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন: “জীবননগর পাখির স্বর্গ হলেও এখন নির্বিচারে ফাঁদ, জাল, এয়ারগান দিয়ে শিকার চলছে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।’
নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ বাংলাদেশের কো-ফাউন্ডার মোহাম্মদ তারিক হাসান বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফলের বাগানে কারেন্ট জালের কারণে প্রতি বছর প্রচুর উপকারী প্যাঁচা মারা যায়, যা কৃষির জন্য বড় ক্ষতি।’

উক্ত সংগঠনের আরেক কো-ফাউন্ডার ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ এএসএম আরিফ উল আনাম বলেন, ‘রাজশাহীর বিলগুলোতে নিয়মিত পাখি শিকার হচ্ছে। বাজারে আবাসিক ও অতিথি—সব পাখিই বিক্রি হচ্ছে। শিকার রোধে হটস্পটগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি ও কঠোর শাস্তি প্রয়োজন।’

SWAN-এর সহসভাপতি মাশুক আহমেদ বলেন, ‘পাখি পরিবেশের ভারসাম্য, পরাগায়ন, মাটির উর্বরতা ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া শিকার বন্ধ করা সম্ভব নয়।’

মিরপুর বার্ডস-এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আফজাল হোসাইন খান বলেন, ‘পাখি শিকার ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পথ তৈরি করে। প্রতিটি পাখিই বাস্তুতন্ত্রের অমূল্য অংশ।’
Bird Life of Bengal-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. নিসর্গ অমি বলেন, ‘মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, শহর হচ্ছে কিন্তু কমছে না পাখি শিকার। শেষ পাখিটিও যখন বিলুপ্ত হবে, তখন অনুতাপ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।’

ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার সিয়ামিয়াত খান জিকো (চলনবিল অঞ্চল) বলেন, ‘পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরে পাখি শিকার এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আইন প্রয়োগ ও স্থানীয়দের ভূমিকা জরুরি।’

বাংলাদেশে পাখি সংরক্ষণ, পাখি’র বিষয়ে সাধারনের মধ্যে আগ্রহ তৈরি এবং সারা দেশের বার্ড ফটোগ্রাফারদের মধ্যে পাখি বিষয়ে আগ্রহ তৈরিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখা ফেসবুক গ্রুপ বার্ডস বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে গ্রুপের অন্যতম প্রধান অ্যাডমিন শাহরিয়ার কবীর রুশদী তাদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘জাল, বন্দুক, বিষটোপ, আঠা – সবই ব্যবহার হচ্ছে। হাওর, উপকূলীয় অঞ্চল কোথাও পাখি নিরাপদ নয়। আইন আছে; প্রয়োগ নেই। পাখি শিকার বন্ধের পাশাপাশি ফসল রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহারের ব্যাপারেও আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি

ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট
error: Content is protected !!