1. live@media71bd.com : Media71 : Media71
  2. info@www.media71bd.com : Media 71 :
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

যাকাত দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

যাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং ধনীদের ওপর ফরজ একটি ইবাদত। সঠিক নিয়মে যাকাত আদায় করলে এটি সম্পদকে পবিত্র করে, দারিদ্র্য দূর করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখে। নিচে যাকাত দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো।


১. যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হতে হবে:

  1. মুসলিম হওয়া – অমুসলিমের ওপর যাকাত ফরজ নয়।
  2. প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া – শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ নয়।
  3. স্বাধীন হওয়া – দাসের ওপর যাকাত ফরজ নয়।
  4. নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া – নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে যাকাত ফরজ নয়।
  5. এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া – যে সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হবে, তা ইসলামী বর্ষপঞ্জির হিসাবে এক বছর হতে হবে।
  6. ঋণমুক্ত হওয়া – যদি কারো ঋণ থাকে এবং তা পরিশোধের পর নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট না থাকে, তবে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।

২. যাকাতযোগ্য সম্পদ

যেসব সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়, সেগুলো হলো:

  • স্বর্ণ ও রুপা:
    • স্বর্ণের নেসাব: ৭.৫ তোলা (৮৭.৫ গ্রাম)
    • রুপার নেসাব: ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম)
  • নগদ টাকা – ব্যাংক বা হাতে থাকা টাকা।
  • ব্যবসার পণ্য – ব্যবসার জন্য রাখা মালামাল ও সম্পদ।
  • শেয়ার ও বিনিয়োগ – লাভের উদ্দেশ্যে রাখা শেয়ার ও বিনিয়োগ।
  • গবাদি পশু – গরু, ছাগল, উট ইত্যাদি (নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি হলে)।
  • ফসল ও ফলমূল – কৃষিজ উৎপাদনের ওপরও যাকাত রয়েছে।

৩. যাকাত নির্ধারণের হার

  • সাধারণ সম্পদের ক্ষেত্রে ২.৫% (অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় ২.৫ টাকা)।
  • কৃষি ফসলের ক্ষেত্রে সেচকৃত জমির উৎপাদনের ৫%, বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত ফসলের ১০%
  • খনি ও সম্পদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ২০%

৪. যাকাত প্রদান করার পদ্ধতি

  1. নিজের সম্পদ যাচাই করা – যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাব করে মোট মূল্যের ২.৫% বের করতে হবে।
  2. প্রাপকের যোগ্যতা নিশ্চিত করা – যাকাত কাকে দিতে হবে, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
  3. প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিতরণ করা – নিজে সরাসরি গরিবদের দিতে পারেন বা নির্ভরযোগ্য সংস্থার মাধ্যমে প্রদান করতে পারেন।
  4. নিয়ত করা – যাকাত দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়ত করতে হবে।

৫. যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিরা

কোরআনের (সুরা তওবা: ৬০) অনুযায়ী যাকাত গ্রহণের অধিকারী ৮ শ্রেণির মানুষ:

  1. ফকির – যাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর মতো সম্পদ নেই।
  2. মিসকিন – অত্যন্ত দরিদ্র, যাদের একেবারেই কিছু নেই।
  3. যাকাত আদায়কারী কর্মচারী – যারা যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের কাজে নিযুক্ত।
  4. নওমুসলিম – যারা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাদের সহায়তা প্রয়োজন।
  5. দাস মুক্তির জন্য – দাসকে মুক্ত করার জন্য যাকাত দেওয়া যায়।
  6. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি – যারা বৈধ কারণে ঋণগ্রস্ত এবং তা পরিশোধের সামর্থ্য নেই।
  7. আল্লাহর পথে ব্যয় – ইসলামের প্রচার-প্রসারে ও জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের জন্য।
  8. মুসাফির – যারা ভ্রমণের কারণে অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

৬. যাকাত গ্রহণের অনুপযুক্ত ব্যক্তিরা

  • ধনী ও স্বাবলম্বী ব্যক্তি।
  • বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানী-নানী এবং সন্তান-সন্ততি।
  • স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারেন না।
  • নবীদের বংশধর (সাইয়্যেদ/হাশেমি পরিবার)।

৭. যাকাত দেওয়ার সঠিক সময়

  • ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সম্পদের ওপর এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত দিতে হবে।
  • রমজান মাসে যাকাত দেওয়া উত্তম, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
  • যে কোনো সময় যাকাত প্রদান করা যায়, তবে দেরি করা উচিত নয়।

যাকাত ধনীদের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে এবং দরিদ্রদের প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে। এটি সমাজে ধনী-গরিবের পার্থক্য কমিয়ে আনে ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। সঠিক নিয়ম মেনে ও যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করে যাকাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট