উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম শাহ হাকিম মুহাম্মদ আখতার (রহ.) আল্লাহর অলি হওয়ার পাঁচটি উপায় বর্ণনা করেছেন। এগুলো হলো:
১. গোনাহ ছেড়ে দেওয়া:
গোনাহ বা পাপ হলো শরিয়তের আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করা, নির্দেশ অবহেলা করা এবং নিষেধ অমান্য করা। ছোট হোক বা বড়, প্রতিটি গোনাহই এড়িয়ে চলা অপরিহার্য। পাপ হলো অন্ধকারস্বরূপ। যখন মানুষ কোনো পাপ করে, তখন তার অন্তরে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এই অন্ধকার পুরো হৃদয় আচ্ছন্ন করে ফেলে, যার ফলে সেখানে আল্লাহর ভালোবাসা ও জ্যোতি জন্ম নিতে পারে না। তাই আল্লাহর অলি হওয়ার প্রথম শর্ত হলো গোনাহ ত্যাগ করা।
আল্লাহ বলেন,
“আর কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করলে, তিনি তাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।”
(সুরা নিসা : ১৪)
২. গোনাহের উপায়-উপকরণ পরিত্যাগ করা:
গোনাহ থেকে বাঁচতে হলে শুধু পাপ নয়, পাপের উপায়-উপকরণও ত্যাগ করতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এমন ব্যক্তি, বিষয়, বস্তু, পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠান, যা মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য হতে প্ররোচিত করে।
আল্লাহ বলেন,
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।”
(সুরা বনি ইসরাইল : ৩২)
“এতিম বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুপায় ছাড়া তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না এবং প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
(সুরা বনি ইসরাইল : ৩৪)
৩. সব সময় আল্লাহর জিকির করা:
জিকির হলো আল্লাহর স্মরণ, যা বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। এটি সর্বোত্তম ইবাদত, কারণ আল্লাহর স্মরণই সকল ইবাদতের প্রধান লক্ষ্য।
আল্লাহ বলেন,
“আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।”
(সুরা আনকাবুত : ৪৫)
“হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে, তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে আনার জন্য এবং তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।”
(সুরা আহজাব : ৪১-৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।”
(বোখারি : ৬৪০৭)
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ:
আল্লাহকে পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসা, যা তাঁর সুন্নতের অনুসরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
আল্লাহ বলেন,
“বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সুরা আলে ইমরান : ৩১)
“হে মুমিনরা, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করো, তবে তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তাঁদের যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী।”
(সুরা নিসা : ৫৯)
৫. আল্লাহর অলির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা:
মানুষ যখন আল্লাহর নিকটবর্তী বান্দা বা অলির সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, তখন তার ভেতরও আল্লাহর ভালোবাসা প্রবল হয়। তাদের সাহচর্য মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চালিত করে।
আল্লাহ বলেন,
“হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।”
(সুরা তওবা : ১১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।”
(বোখারি : ৬৫০২)